জাতিসংঘের নতুন উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিমত
গতকাল সোমবার বিকেল পাঁচটায় নিরাপত্তা পরিষদে গাজা অভিযান নিয়ে ভোটাভুটি হওয়ার কথা ছিল। আরব দেশগুলো এ নিয়ে নতুন খসড়াও তৈরি করছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এদিন ভোটে অংশ নিতে চায়নি। এর আগে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিয়েছে।
ত্রের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়েছে, আগে ভেটো দিলেও এবার যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিতে চাইছে না। ভেটোর পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল যুক্তি দিয়েছে, যুদ্ধবিরতি হামাসকে সুবিধা করে দেবে। তবে আজ মঙ্গলবার এ বিষয়ে চূড়ান্ত ভোটাভুটি হতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবের খসড়া নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। সে বিষয়ে ঐক্যমত্য না হওয়া পর্যন্ত দেশটি প্রস্তাব মানবে না বলেই জানা গেছে।
খবরে বলা হয়েছে, দুবাইয়ের মধ্যস্থতায় আনা নতুন প্রস্তাবটিতে অবিলম্বে হামাস-ইসরায়েলের মধ্যে চিরতরে শত্রুতা বন্ধ করে গাজা উপত্যকায় নিরাপদ ও শর্তহীন মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর বিষয়ে আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে গাজা এবং পশ্চিম তীরের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিষয়টি প্রস্তাবে গুরুত্ব পেয়েছে।
এদিকে, বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরাইলের পরবর্তী পর্যায়ের পরিকল্পনা কী, তা নিয়ে আলোচনা করতে একই দিনে ইসরাইল গিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লয়েড অস্টিন ।
আজ মঙ্গলবার দিনভর মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী তেল-আবিবে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সবচেয়ে লম্বা বৈঠক হয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োআভ গ্যালান্টের সঙ্গে। সেখানেই গাজা অভিযানের তীব্রতা ক্রমশ কমিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সে ইঙ্গিত দিয়েছেন। বস্তুত, বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে সংঘর্ষ-বিরতির আবেদন জানানো হচ্ছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদেও ফের এ বিষয়ে আলোচনা শুরু হওয়ার কথা। তার ঠিক আগে, এই ইঙ্গিত মিলল।
নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের খসড়া বেশ কয়েকটি সংবাদ সংস্থা দেখেছে। এই খসড়ায় “নিরাপদ ও অবাধ মানবিক যোগাযোগের জন্য জরুরি ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির” আহ্বান জানানো হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে ট্রাক-ভর্তি ত্রাণ-সামগ্রী গাজায় পৌঁছাচ্ছে, এবং ত্রাণ সরবরাহের জন্য গত সপ্তাহে ইসরাইল আরও একটি ক্রসিং খুলে দিয়েছে। তবে, জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা জানিয়েছে, যুদ্ধের আগে গাজাতে দৈনিক ৫০০ ট্রাক ত্রাণ নিয়ে প্রবেশ করত, কিন্তু শনিবার মাত্র ১২১টি ত্রাণ-বোঝাই ট্রাক গাজা ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে, যে সংখ্যা অনেক কম।
সোমবারের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে জানিয়েছে, ৭ অক্টোবরের ঘটনার পর ইসরায়েল যে পাল্টা লড়াই শুরু করেছে, যুক্তরাষ্ট্র সেটি সমর্থন করে। কারণ ইসরায়েলের আত্মরক্ষার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। কিন্তু একইসঙ্গে বেসামরিক মানুষকে রক্ষা করার দায়িত্বও আছে ইসরায়েলের। সেদিকে নজর দিতে এদিকে যুক্তরাজ্যের সানডে টাইমসে প্রকাশিত এক যুগ্ম নিবন্ধে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানালেনা বেরবকও গাজায় “টেকসই যুদ্ধবিরতি”র আহ্বান জানিয়েছেন।
তারা লিখেছেন, “ইসরাইলের অভিযান যদি ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে ফেলে, তাহলে ইসরাইল এই যুদ্ধে জয়ী হবে না।” ইসরাইলের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবরে হামাস ইসরাইলে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ১২০০ মানুষ হত্যা করে এবং ২৪০ জনকে জিম্মি করে নেয়। হামাসকে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপিয়ান ইউনিওন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে গণ্য করে।
গাজায় হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মত্রানালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইসরাইলের বিমান হামলা এবং স্থল অভিযানে ১৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
নিরাপত্তা পরিষদে সংঘর্ষ-বিরতি নিয়ে ফের ভোটাভুটির দোলাচলের মধ্যেই ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফের সংঘর্ষ-বিরতির দাবি তুলেছেন। এদিকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্র। নতুন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে দেশটি।
লোহিত সাগরে নিরাপত্তা বাড়াতে একটি আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। লোহিত সাগর দিয়ে যে জাহাজগুলো যাবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এই গোষ্ঠী। গত কিছুদিনে একাধিকবার ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা এই পথে মার্কিন জাহাজের উপর আক্রমণ চালিয়েছে।
অস্টিন জানিয়েছেন, ‘এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা এবং সকলে মিলে এর সমাধান করতে হবে।’ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই অপারেশনে যোগ দেবে বাহরাইন, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, স্পেন এবং সেশেলস।
২০২২ সালের এপ্রিলে এই রাস্তায় একটি নিরাপত্তা বাহিনী আগেই তৈরি করা হয়েছিল। এবার সেই বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করা হবে বলে ঠিক হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আগেই তিনটি ডেস্ট্রয়্যার যুদ্ধ জাহাজ ওই এলাকায় পাঠিয়ে দিয়েছে। যারা নিয়মিত সেখানে টহল দিচ্ছে। কিন্তু তাতেও নিরাপত্তার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ হয়নি। বহু বাণিজ্যিক জাহাজ ওই পথে চলাচল বন্ধ রেখেছে।গত ৩ ডিসেম্বর ইরানের মদতপুষ্ট হুতি বিদ্রোহীদের মিসাইল তিনটি জাহাজে গিয়ে পড়ে। তিনটি জাহাজই বাণিজ্যিক। এরপরই ওই পথে জাহাজ চালানো বন্ধ করে দেয় অসংখ্য জাহাজ সংস্থা।