ছাত্রলীগ নেত্রী নিয়োগ না পাওয়ায় জাবি উপাচার্য অবরুদ্ধ
প্রান্তডেস্ক:জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমকে দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। একই সময়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি পরীক্ষার্থীদের উপাচার্যের দপ্তর থেকে বের করে দিয়েছেন।আজ রবিবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের তৃতীয় তলায় উপাচার্যের দপ্তর অবরোধ করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
ছাত্রলীগ সূত্র বলছে, ছাত্রলীগের দাবির প্রেক্ষিতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ পাননি শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাদিয়া আফরিন পাপড়ি। যে কারণে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান লিটনের নির্দেশে নেতাকর্মীরা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেছেন।
এর আগে পাপড়িকে নিয়োগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের হুমকি দেয় ছাত্রলীগ। সিন্ডিকেট সদস্য ও সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরকেও চাপ দেয় তারা। গত বৃহস্পতিবার উপাচার্যের দপ্তরে গিয়ে অবরোধের হুমকি দিয়েছিলেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় রসায়ন বিভাগে তিন প্রভাষকের নিয়োগ চূড়ান্ত হয়। নিয়োগপ্রাপ্তরা ৩৯, ৪২ ও ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তারা প্রত্যেকেই নিজ বর্ষে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম বা দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন। তবে ছাত্রলীগের সহসভাপতি পাপড়ি স্নাতকে পঞ্চম ও স্নাতকোত্তরে তৃতীয় স্থান অর্জন করেন। প্রভাষক পদে তাকে নিয়োগ না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
জানা যায়, রবিবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব রিমোট সেনসিং অ্যান্ড জিআইএসের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড শুরু হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উপাচার্যের দপ্তরে গিয়ে প্রার্থীদের বের করে ফটক আটকে দেন। এ সময় তারা প্রার্থীদের বলতে থাকেন, ‘আজকে বোর্ড হবে না, আপনারা চলে যান।’
পরে দুপুর ১২টায় উপাচার্যের নির্দেশে তার একান্ত সচিব গৌতম কুমার বিশ্বাস নিয়োগ প্রার্থীদের অনিবার্য কারণে বোর্ড স্থগিতের কথা জানান। নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষার তারিখ পরবর্তীতে জানিয়ে দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার ও প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বলেন, অনিবার্য কারণে আজ নিয়োগ বোর্ড স্থগিত হয়েছে। এটা অনেক কারণেই হতে পারে। তবে আজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রার্থীদের বের করে দিয়েছে। এক্সটার্নালরা উপস্থিত থাকার পরও নিয়োগ বোর্ড বসানো যায়নি।
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ছাত্রলীগ শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে বাধা দেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে স্বাধীনতাবিরোধী ও জামায়াত-বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত লোকদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এরই প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে।
ছাত্রলীগ নেত্রীর নিয়োগের সঙ্গে অবরোধের কোনো সম্পর্ক আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সম্পর্ক নেই। আমরা তো চাইলেই সিন্ডিকেট আটকে দিতে পারতাম।
অবরোধের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘আমাকে কেউ অবরুদ্ধ করেনি। তারা শুধুমাত্র নিয়োগপ্রার্থীদের বাধা দিয়েছে। পরবর্তীতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আমাদের সঙ্গে বসেছিল। স্বাধীনতাবিরোধী কারও নিয়োগ না দেওয়ার বিষয়ে তারা দাবি জানিয়েছে। আমরা তাদের দাবির বিষয়ে শুনেছি। তাদের আশ্বস্ত করেছি।’
এদিকে ইন্সটিটিউট অব রিমোট সেন্সিং অ্যান্ড জিআইএসের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে বাধা প্রদান ও প্রার্থীদের উপাচার্যের দপ্তর থেকে বের করে দেওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক শেখ তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমাদের ইন্সটিটিউটে শিক্ষক নিয়োগ খুবই জরুরি। একটি শূন্যপদের বিপরীতে ২৩জন ক্যান্ডিডেট ছিল। তবে বোর্ড স্থগিত হওয়া খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত।