প্রান্তডেস্ক: প্রস্তাবিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’-এ পরিবর্তন আনতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি একটি খোলা চিঠি লিখেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ডেপুটি সেক্রেটারি মোহাম্মদ ইউসুফের কাছে লেখা ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনে পূর্বের ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের’ দমনমূলক ধারাগুলো রয়ে গেছে। পূর্বে এসব ধারা বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে হুমকিতে ফেলতে বারবার ব্যবহার করা হয়েছে। ২২শে আগস্ট অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ওয়েবসাইটে চিঠিটি প্রকাশ করা হয়।
অ্যামনেস্টি ওই চিঠিতে লিখেছে, কয়েকটি অপরাধের জন্য কারাদণ্ডের সময়কাল কিছুটা কমানো ছাড়া প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখতে পায়নি তারা। আইনের খসড়া প্রাথমিকভাবে যাচাই করার পর সংস্থাটি জানিয়েছে, মোট আটটি অপরাধে কারাদণ্ডের সময়কাল কমানো হয়েছে। এ ছাড়া দুই ধরনের অপরাধের জন্য দণ্ড বাতিল করা হয়েছে, তিন ধরনের অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ জরিমানার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং অপরাধের পুনরাবৃত্তির জন্য জরিমানা বৃদ্ধির শাস্তি অপসারণ করা হয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থাটি আরও বলেছে, মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার হলো একটি মৌলিক মানবাধিকার, যা আইসিসিআরপি’র অনুচ্ছেদ ১৯-এর অধীনে নিশ্চিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ নিজেও এতে স্বাক্ষর করেছে। এই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রত্যেকেরই কোনো ধরনের বাধা ছাড়া মতামত রাখার অধিকার রয়েছে এবং প্রত্যেকের মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। একইভাবে বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে ‘চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা’, ‘প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা’ এবং ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতা’র কথা বলা হয়েছে। অথচ প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইন যদি সংশোধন না করা হয়, তাহলে এটি পূর্বের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতোই থেকে যাবে।এ আইন সাংবাদিকদের ভয় দেখানো, হয়রানি ও নির্বিচারে গ্রেপ্তার করতে, ভিন্নমত দমন করতে এবং সমালোচকদের নিশ্চুপ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশে ‘টেলিকমিউনিকেশন অ্যাক্ট ২০০১’ এবং ‘পর্নোগ্রাফি কন্ট্রোল অ্যাক্ট-২০১২’ এর মতো কিছু আইন রয়েছে যা মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু আইসিটি আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনই ভিন্নমতকে দমিয়ে রাখতে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করতে সব থেকে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার অধীনে মোট ১২৭১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এরপর ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সাত হাজারেরও বেশি মানুষকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে অভিযুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে অ্যামনেস্টি।
তারা আরও বলে, আইসিটি আইনের দমনমূলক ৫৭ ধারা সরিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো আরেকটি কঠিন আইন আনা হয়েছিল। এখন সেই আইন বদলে সাইবার সিকিউরিটি আইনের মতো প্রায় অভিন্ন আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। চিঠিতে প্রস্তাবিত নতুন আইনের কিছু সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে অ্যামনেস্টি। সংস্থাটি বলেছে, শুধুমাত্র আইসিসিআরপিসহ অন্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুসরণ করেই নতুন সাইবার আইন প্রণয়ন করতে হবে। নতুন আইনের ২১, ২৫ ও ২৮ নম্বর ধারাগুলো বাতিলের প্রস্তাব দিয়েছে অ্যামনেস্টি। কারণ পূর্ববর্তী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দেখা গেছে এসব আইন ব্যবহার করে ভিন্নমতকে দমন করা হয়েছে। সরকার অ্যামনেস্টির সুপারিশগুলোকে আমলে নেবে বলেও চিঠিতে আশা প্রকাশ করা হয়।