আজ বুরুঙ্গা বাজার গনহত্যা দিবস
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ মে, ২০২৩ ১২:৫৭ অপরাহ্ণ | সংবাদটি ২৫ বার পঠিত
সুকান্তিভট্টাচার্য্য:: ২৬ মে, আজও গ্রীষ্মের সকাল। ৫২বছর আগে এমনি সকাল হয়েছিল বুরুঙ্গা বাজার গ্রামে, কিন্তু সেদিনের সকাল বুরুঙ্গা বাজারবাসীর জন্য ছিল অন্যরকম, বিভীষিকা ময়, নিরীহ সহজ সরল বাঙ্গালির রক্তে বুরুঙ্গা বাজারের সবুজ প্রান্তর লাল হয়েছিল।
সেই হত্যাযজ্ঞ সংগঠিত করেছিলো পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর, রাজাকার আলবদরের সহযোগিতায়।
ফিরে যাই সেইদিনে, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক তাজুল মোহাম্মদের হাত ধরে তাঁরই প্রামান্য বই “সিলেটে গনহত্যার” সহযোগিতায়।”২৬ মে সকাল দশটা। হটাৎ করেই পাক সেনাবাহিনীর চারটি এদিকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়”।
“এই গাড়ি বহরে নেতৃত্ব দিচ্ছে পাক হানাদার বাহিনীর এক ক্যাপ্টেন। নাম নুরুদ্দিন খান *। এসে পৌছায় বুরুঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে” পৌছাবার সঙ্গে সঙ্গে তাদের ঘিরে ফেলে তাদেরই এদেশীয় অনুচরেরা। এই দালালদের হাব ভাব দেখেই বুঝা যাচ্ছিল এরা আগথেকেই জানতো তাদের প্রভুদের আগমন বার্তা।
ক্যাপ্টেন এসেই ঘোষণা করলো সবাইকে পরিচয় পত্র গ্রহন করতে হবে।
কিন্তু অন্যান্য জায়গায় সংগঠিত হত্যাকাণ্ডের খবর কিছু কিছু তো কানে এসেছে। তাই এলাকর লোকজন এদের কথায় বিশ্বাস না করে যখন মাঠে আসতে অনিহা প্রকাশ করছিলো। তখন পাকিদের উচ্ছিষ্ট ভোগী নরপশুরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে লোকজনকে ধরে নিয়ে এসে জড়ো করে স্কুলের মাঠে।
ধরে আনা লোকজনকে দুই ভাগে ভাগ করাহয় একভাগে মুসলমান আরেক ভাগে হিন্দু। এরপর দড়ি দিয়ে বেধে ফেলাহয় এই অবস্থা দেখে অনেকেই বুঝতে পারেন তাদের কি হতে যাচ্ছে! মৃত্যু সামনে।
এই যখন অবস্থা তখন স্কুলের শিক্ষক প্রীতি রঞ্জন চৌধুরী, রামু মালাকার ও দেবেন্দ্র দেব দৌড়ে প্রণে রক্ষা পেয়েছিলেন।
পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন শিকার হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে দেখে মুহূর্তে নির্দেশ দেয় গুলি করতে। সাথে সাথে গর্জে উঠে মেশিন গান সাথে সাথে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ৭২টি তাজা প্রান। তাৎখনিক ভাবে শনাক্ত করা হয়েছিলো ৬৩ জনকে। আর আহত হয়ে বেঁচে গিয়েছেলেন বুরুঙ্গা স্কুলের পরবর্তীতে শিক্ষক বর্তমানে অবসর প্রাপ্ত ” শীনিবাস চ্ক্রবর্ত্তী,জিতেন্দ্র কুমার শুক্লবৈদ্য, কামিনি মালাকার, ও গোপেন্দ্র দেব।
এ গনহত্যা থেকে বেচে যাওয়া বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রীতিরঞ্জণ চৌধুরী ডেইলি স্টার এর সাথে সাক্ষাৎকারে বলেন “২৬ তারখে সকালে স্কুল মাঠে আটটায় যাবার কথা থাকলেও আমার যেতে একটু দেরী হয়ে যায।আমি গিয়ে যখন পৌছাই তখন দেখি হিন্দু মুসলমানদের দুটো রুমে আলাদা করা হচ্ছে, আমাকে দেখে ধরে হিন্দুদের রাখা রুমে নিযে যায়। যখন বাঁধতে যাবে সবাই ভয়ে চিৎকার শুরু করে। ক্লাস রুমের একটা জানালা কিছুটা ফাকা ছিলো ভাঙাও ছিলো। দেখলাম প্রাণে বাঁচতে হলে আমার পালানো ছাড়া উপায় নেই।আমি জানলা ধরে টান দিতেই খুলে গেল জানালা। লাফিয়ে জানালা টপকালাম ওরা ব্রাশফায়ার শুরু করলো। এরই মাঝে অনেকটা ভাগ্যক্রমে আমি বেঁচে যাই”।
বুরুঙ্গা হত্যাকান্ড থেকে দুই বার গুলি খেয়ে বেঁচে যাওয়া শ্রী নিবাস চক্রবর্ত্তী দ্যা ডেইলি স্টার কে বলেন “বৃষ্টির মতো গুলি পড়েছিল হাতবাঁধা মানুষের উপর। রক্তের মাঝে ডুুবে গিয়েছিল লোকগুলো। কিন্তু এখানেই শেষ নয মৃত্যু যন্ত্রনায় কাতর লোকগুলোর উপর কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় নরপশুরা। কেউ নড়াচড়া করলেও বেয়নেট চার্জ করে, গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। আমার বাম হাতে মেশিন গানের গুলি লাগার সঙ্গে সঙ্গে আমি মৃতের মত শুয়ে রইলাম।
ধ্বংসযজ্ঞ শেষ করে নরপশুরা যখন চলে যায় তখন আহত কেই কেউ উঠে দাড়ালে নরপশুরা ফিরে এসে রাইফেল দিয় গুলি করে। আমরা পিঠে লাগে দ্বিতীয় গুলি, ভাগ্যিস গুলিটা আমার শরীরের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গিয়েছিলো।
এই গনহত্যায় আমি আমার বাবা নিকুঞ্জ বিহরী চকবর্ত্তী ও ভাই নিত্যরঞ্জন চক্রবর্ত্তী কে চিরতরে হরিয়েছি।
সেদিনের গনহত্যায় যাদে হারিয়েছি তাদের একটা অসমাপ্ত তালিকা নিম্নে দিলাম। ১।রাম রঞ্জন ভট্টাচার্য্য ২। সমরঞ্জিত চক্রবর্ত্তী ৩।” নিত্যরঞ্জন চক্রবর্ত্তী ৪।নিকুঞ্জ বিহারী চক্রবর্ত্তী ৫। বিশ্বতোষ চক্রবর্ত্তী ৬।দূর্গাপদ আচার্য ৭।যোগেশ দেব ৮।রজনীকান্ত দেব ৯। রেবতী মোহন দত্ত১০।রণজিৎ দেব ১১। গজেন্দ্র কুমার সেন১২।সুখরাম শুক্লবৈদ্য১৩।দিগেন্দ্র শুক্লবৈদ্য ১৪।হরিচরণ শুক্লবৈদ্য১৫।সুধীরাম শুক্লবৈদ্য ১৬।কিরণ রাম শুক্লবৈদ্য১৭।নীরোদ রাম শুক্লবৈদ্য ১৮।রশন চন্দ্র দাশ ১৯।অশ্বিনী কুমার দেব২০। সুণীল মালাকার ২১।গতর মালাকার ২২।চিত্তরঞ্জন মালাকার২৩।ছাওধন শব্দকর২৪।রবীন্দ্র শব্দকর২৫।প্রহ্লাদ শব্দকর ২৬।মযনা শব্দকর ২৭।বেণুরাম শব্দকর ২৮।দুলাল শব্দকর ২৯ দ্বারিকা শব্দকর ৩০। সোনামনি নমশূদ্র ৩৪।বেহারী নমশূদ্র ৩৫।সদয় নমশূদ্র। ৩৬। অক্ষয় নমশূদ্র ৩৭।সরই নমশূদ্র ৩৮।৩৯,।মহেন্দ্র শব্দকর ৪০।হরকুমার শব্দকর ৪১।পরেশ শব্দকর ৪২।রামেন্দ্র শব্দকর। ৪৩।রাখাল শব্দকর ৪৪।শ্যামা শব্দকর ৪৫।গনেশ শব্দকর ৪৬।গঙ্গেশ শব্দকর ৪৭।সতীশ চন্দ্র দেব ৪৮।,অভিমুন্যু দেব ৪৯।সতীন্দ্র দেব ৫০।গোপেশ দেব ৫১।আনন্দ দেব।৫২।নিমরঞ্জন দাশ ৫৩।শ্যামা চন্দ্র দেব ৫৪।বেহারী দেব ৫৫। ধীরেন্দ্র দেব ৫৬।সুনীল দেব গঙ্গেশ দেব ৫৭।বিনয় দেব ৫৮।রমেশ দেব ৫৯।পুলিন চন্দ্র দাশ ৬০ অশ্বিনী দাশ ৬১।ব্রজেন্দ্র দাশ,মহেন্দ্র নমশূদ্র ৬২। নন্দলাল পাল ৬৩। পরেশ চন্দ্র দেব।
স্বাধীনতার ৫২ বছর পার হয়ে গেছে সেদিনের শহীদদের তৃতীয় প্রজন্ম চলে এসেছে,কিন্তু আজো সেদিন যারা রস্তা দেখিযে প্রতন্ত গ্রামে নিয়েগিয়েছিল হানাদারদের তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করানো হলোনা।
বিদ্রঃ শহীদদের নামগুলো মুক্তিযুদ্ধ গবেষক তাজুল মোহাম্মদ এর সিলেটে গনহত্যা বই থেকে নেওয়া।
