জঙ্গিবাদসহ আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনে পুলিশের প্রশিক্ষণ আধুনিকরণ করা হচ্ছে
প্রান্তডেস্ক:সন্ত্রাস,জঙ্গিবাদ, সাইবার অপরাধ,অস্ত্র ও মাদক চোরাচালানসহ আন্তঃদেশীয় অপরাধ মোকাবেলায় পুলিশের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম আরও আধুনিকরণ করা হচ্ছে। নতুন করে সিঙ্গাপুরসহ উন্নত দেশের আদলে আধুনিক স্মাট পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলার টার্গেট নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে মিরপুর পুলিশ স্টাফ কলেজে প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ২০০০ (দুই হাজার) সালের ৩০শে নভেম্বর পুলিশ স্টাফ কলেজের যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত পুলিশ ষ্টাফ কলেজ নতুৃন নতুন কোর্স চালু করছে। বর্তমানে মিরপুর পুলিশ ষ্টাফ কলেজে নতুন করে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ বিষয়ক বিভিন্ন কোর্স চালু করা হয়েছে। সেখানে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদের মানবাধিকার ,কম্পারেটিভ পুলিশিং, সন্ত্রাসবাদ, সাইবার অপরাধ, অর্থনৈতিক অপরাধ, অস্ত্র ও মাদকের মতো আন্তঃদেশীয় অপরাধ বিষয়গুলোকে প্রশিক্ষণের কালিকুলাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। পুলিশ ষ্টাফ কলেজ আইন অনুযায়ী কলেজের গবেষণা ও প্রকাশনা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। মূলত পুলিশিং, ক্রিমিনোলজি, জননিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তারা কাজ করছেন।
রাজধানীসহ সারাদেশের জেলা গুলোর থানা গুলোকে আরও আধুনিকরন, থানার সেবার মান আরও বাড়ানো এবং মাঠ পর্যায়ে পুলিশের সেবার মান কি করে আরও বাড়ানো যায় তা নিয়ে পুলিশ কাজ করছেন।
সরকার ঘোষিত রূপকল্প ২০৪১ এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্মাট বাংলাদেশ দর্শনকে বাস্তবায়ন করার জন্য শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কার্যক্রমে পুলিশকে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
স্মাট পুলিশিং : আগামী ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। ডিজিটাল থেকে স্মাট বাংলাদেশে রুপান্তরিত করার কাজ চলছে। বিজ্ঞান তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর স্মাট পুলিশ করার টার্গেট ।
এখন পুলিশ অপরাধ দমনে আধুনিক বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করার বাংলাদেশ পুলিশ ২০৪১ সালের উন্নত দেশের আদলে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। ইতোমধ্যে তদন্ত কার্যক্রমে সক্ষমতা বৃদ্ধি, আধুনিক নিরাপত্তা পরিকল্পনা, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ,যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ সময়ের তাগিয়ে নতুন নতুন ইউনিট প্রতিষ্ঠাসহ পুলিশকে স্মাট পুলিশে রুপান্তরের কার্যক্রম চলমান।
প্রাথমিক ভাবে অনলাইন জিডি : পুলিশ সার্ভিস সমূহের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেবা হচ্ছে জিডি বা সারণ ডাইরী। আগে জিডি করা নিয়ে থানায় নানা ভাবে হয়রানীর শিকারের অভিযোগ ছিল। গেল বছর থেকে জিডি প্রক্রিয়া অনলাইনে শুরু হয়েছে। যা পুলিশকে স্ম্টা পুলিশ হিসাবে রুপান্তর করার একটি বড় পদক্ষেপ। ২০২২ সালের ২১ জুন থেকে অনলাইনে জিডি কার্যক্রম প্রথম আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয়েছে। পুলিশের ওয়েবসাইটে অভিযোগ করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯, আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে মামলা তদন্ত,অপরাধ প্রতিরোধ,অপরাধী শনাক্ত করণসহ বিভিন্ন ইউনিটে সেবার মান পর্যায়ক্রমে আধুনিরকরণ করা হচ্ছে। যা পর্যায়ক্রমে স্মাট পুলিশিংয়ে যাবে। পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের ১২টির বেশী দেশে এখন স্মাট পুলিশিং ব্যবস্থা রয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে মোবাইল নেটওয়ার্ক, ইণ্টারনেট টেলিকমিউনিকেশন ও বিভিন্ন সফর্টওয়ার ব্যবহারের মাধ্যমে পুলিশ মামলার তদন্ত কার্যক্রমে ব্যবহার করছে। সেই সঙ্গে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ,অপরাধী শনাক্ত করণ,সার্ভিলেন্স কার্যক্রমে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করছে। ইতোমধ্যে পুলিশের ইমিগ্রেশন সিস্টেমকে অনেক উন্নুত করা হয়েছে। ইমিগ্রেশনকে সর্বক্ষণ মনিটরিং করা হচ্ছে। মূহুর্তের মধ্যে অপরাধী শনাক্ত করা সম্ভব। সিআইডিতে আধুনিক ফরেনসিক ল্যাবের প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুত অপরাধী শনাক্ত করা যায়। সন্দেহভাজনদের প্রযুক্তির মাধ্যমে নজরদারি করা হচ্ছে।
পুলিশকে স্মাট পুলিশে রূপান্তরিত করতে পুলিশের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়নে পুলিশ একাডেমি, পুলিশ স্টাফ কলেজ,পুলিশ ট্রেনিং সেণ্টার গুলোতে নতুন নতুন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।
পুলিশের গুণগত ও আচরণগত পরিবর্তনে সকল স্তরে পুলিশ সদস্যদের জন্য দক্ষতা, উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩৫ হাজারেরও বেশী পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। উন্নত বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সাইবার ক্রাইম ও ফাইনান্সিয়াল ক্রাইম। এই দুই অপরাধ প্রতিরোধে ইতিমধ্যে সিআইডিসহ মেট্রোপলিটন পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে কার্যক্রম চলমান আছে।
মিরপুর পুলিশ স্টাফ কলেজের কর্মকর্তার সংবাদকে জানান, আগামী দিনে স্মাট বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিধানে পুলিশকে স্মাট পুলিশে রুপান্তরের কার্যক্রম চলমান আছে। টার্গেট ২০৪১ সালের চ্যালেঞ্জ সাইবার ক্রাইম ও ফাইনান্সিয়াল ক্রাইম মোকাবেলার জন্য পুলিশের সাইবার ইণ্টেলিজেন্স, বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার ও আধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়নের বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশের স্মাট পুলিশ হবে জনতার পুলিশ।
পুলিশ ষ্টাফ কলেজের রেক্টর অতিরিক্ত আইজিপি মল্লিক ফখরুল ইসলাম তার কার্যালয়ে সংবাদকে জানান, মিরপুর স্টাফ কলেজে নতুন নতুন কোর্স চালু করা হচ্ছে। সাইবার অপরাধ থেকে শুরু করে আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনে আরও আধুনিকরণে কাজ করা হচ্ছে। পুলিশের আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনের (স্যার) পরিকল্পনায় স্টাফ কলেজে পুলিশের প্রশিক্ষণে নতুন কোর্স গুলো চালু করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। স্মাট পুলিশ গঠন নিয়ে কাজ চলছে।