ভাষাসৈনিক, মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আব্দুস সামাদ আজাদের ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রান্তডেস্ক: ভাষাসৈনিক, মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, সাবেক মন্ত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, প্রয়াত জাতীয় নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ’র ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ বৃহস্পতিবার।
সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায়ই ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকায় বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দেশের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আব্দুস সামাদ আজাদ। দীর্ঘ দুর্ভোগ, জেল, জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতনের হুলিয়া মাথায় নিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অসাম্প্রদায়িক চেতনার সূর্য সন্তান হিসেবে দীর্ঘকাল রাজনীতি করে গেছেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সহচর, সাবেক কৃষি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার ভূরাখালি গ্রামে ১৯২২ সালের ১৫ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম শরীয়ত উল্লা। সামাদ আজাদ শরিয়ত উল্লাহর দ্বিতীয় পুত্র। সামাদ আজাদ প্রথমে গ্রামের স্কুলে ও পরে দিরাই উপজেলার জগদল ভাটিরগাঁও স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা শেষের পর ১৯৪৩ সালে সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক এবং ১৯৪৮ সনে সিলেট মুরারী চাঁদ কলেজ থেকে ¯œাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ও ইতিহাস শাস্ত্রে অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ও ইতিহাস বিষয়ে এম এ পাশ করেন। তৎকালীন সময়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকার কারণে সরকার তার এম এ ডিগ্রি কেড়ে নেয়। পুরো ভারতবর্ষ যখন এক তখনই রাজনীতিতে অভিষেক ঘটেছিলো আব্দুস সামাদ আজাদের। ১৯৪০ সালে সুনামগঞ্জ মহকুমা মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি হন তিনি। পরে অবিভক্ত আসামের সভাপতির দায়িত্ব পান। ১৯৪৯-৫০ সালে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকও হন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ করায় বিপাকে পড়েন ছাত্রনেতা আব্দুস সামাদ আজাদ। এমনকি এ ‘অপরাধে’ তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ১৯৫১ সালে পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগে যোগ দেন আব্দুস সামাদ আজাদ। তখন চলছে ভাষার অধিকার আদায়ের লড়াই। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের কারণে আব্দুস সামাদ আজাদকে কারাবরণও করতে হয়। রাজনৈতিক দক্ষতার কারণে ১৯৫৩ সালে যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান আব্দুস সামাদ আজাদ। পরের বছর যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমএলএ) নির্বাচিত হন। ছাত্রলীগ-যুবলীগ অধ্যায়ের ইতি ঘটিয়ে ১৯৫৫ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন তিনি। আদর্শগত কারণে ১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগে ভাঙন ধরলে মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে আব্দুস সামাদ আজাদ কৃষক শ্রমিক পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৫৮ সালে দেশে সামরিক আইন জারি হলে আটক হন তিনি। মুক্তি পান চার বছর জেল খাটার পর। ১৯৬৪ সালে আবারো গ্রেফতার হন তিনি। স্বাধিকার আন্দোলনের উত্তাল সময়ে ১৯৬৯ সালে আব্দুস সামাদ আজাদ ফিরে আসেন নিজের ঘর আওয়ামী লীগে। নির্বাচিত হন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে। ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে তিনি সিলেট থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন। আন্দোলনের পথ বেয়ে আসে মহান মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অসামান্য সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় দেন আব্দুস সামাদ আজাদ। প্রথমে তিনি মুজিবনগর সরকারের রাজনৈতিক উপদেষ্টা এবং ভ্রাম্যমাণ রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পান। দেশে দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেন। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন তিনি। ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় নির্বাচনে আব্দুস সামাদ আজাদ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে দুটি আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে পট পরিবর্তন হলে ষড়যন্ত্রীদের হাতে গ্রেফতার হন তিনি। ভাগ্য ভালো থাকায় বেঁচে গিয়েছিলেন নইলে ৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবসে ৪ জনকে নয় স্মরণ করতে হতো জাতীয় ৫ নেতাকে। প্রাণে বেঁচে গেলেও ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত কারার অন্ধকারেই থাকতে হয় তাকে। নিপীড়ন-নির্যাতনেও রাজনীতির মাঠ কখনোই ছেড়ে যাননি আব্দুস সামাদ। ভাষা আন্দোলন-মুক্তিযুদ্ধের পর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও মাঠে ছিলেন শুরু থেকেই। এরশাদ সরকারের বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে গণতন্ত্রের মুক্তিতে অসামান্য অবদান রাখেন তিনি। এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ওই সময় আবার তিনি পান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব। সাফল্যের সঙ্গে তিনি তার সে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের পরবর্তী নির্বাচনেও তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায়ই ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকায় বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আব্দুস সামাদ আজাদ।
এদিকে, প্রয়াত জাতীয় নেতা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুস সামাদ আজাদের ১৮তম মৃত্যু বার্ষিকী পালনে বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আব্দুস সামাদ আজাদ ফাউন্ডেশন : আব্দুস সামাদ আজাদ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় মরহুমের বনানীস্থ কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও কবর জেয়ারত এবং বাদ আসর কলাবাগানস্থ লেকভিউ জামে মসজিদ, লেক সার্কাস, কলাবাগানে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ফাউন্ডেশনের দপ্তর সম্পাদক মুমতাহিনা রীতু এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।

