শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলার রায় হেনস্তার জন্য: বিএনপি
প্রান্তডেস্ক: একুশ বছর আগে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনার মামলার রায়কে ‘ফরমায়েশি’ বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। বিএনপি বলছে ‘কেবলমাত্র রাজনৈতিকভাবে হেনস্তা করতেই এই রায়। আইন আদালতকেও সরকার প্রতিহিংসা চরিতার্থের রাজনীতির অনুসঙ্গ করে ফেলেছে। সাধারণ জনগণও তা বুঝে গেছে।’
এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘বিরোধী দলকে নির্মূলের জন্য বেছে বেছে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অবৈধ সরকারের নির্দেশেই রায় দেয়া হচ্ছে। প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের জোরে সরিয়ে দেয়াসহ আওয়ামী সরকারের নির্দেশে আদালতকে দিয়ে অনেক কিছুই করা হয়েছে এবং হচ্ছে। এসব কার নির্দেশে হচ্ছে সেটির জন্য বেশি লেখাপড়ার প্রয়োজন পড়ে না। সাধারণ জনগণও তা বুঝে গেছে।’
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব, কলারোয়া উপজেলার যুবদলের সভাপতি আব্দুল কাদের বাচ্চু (৪২), পৌর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান রনজু (৪০) ও সাবেক ছাত্রদল সভাপতি রিপন (৩৫)।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা এমরান সালেহ বলেন, ‘একটি মামলাকে পরে তিন মামলায় বিভক্ত করে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে সীমাহীন ও নিষ্ঠুর নির্যাতন ও হয়রারি করা হয়েছে। হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ বিএনপি নেতাকর্মীরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকা সত্ত্বেও প্রতিহিংসার কারণে তাদের জড়ানো হয়েছে। এমনকি এফআইআরে হাবিবুল ইসলাম হাবিবের নাম ছিল না।’
বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ বলেন, ‘এর আগেও ২০২১ সালে তৈরি করা আইনে হাবিবুল ইসলামকে ১০ বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার আজকের রায়ও আওয়ামী সরকারের ইচ্ছার বাইরে হয়নি।’
তিনি বলেন, যতই দিন যাচ্ছে ততই একের পর এক সরকারের হিংস্র রূপের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে, মানবিক বিবেচনাগুলো পদদলিত করা হচ্ছে। আজ আদালতের রায়ে সরকারের নিষ্ঠুর দানবীয় রুপের আরও একটি নতুন চেহারা দেখা গেল।
এই মামলার রায়ের বিরুদ্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি এই নেতা লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘সরকার ক্ষমতাসীন হয়েই নিম্ন আদালতকে কব্জায় নিয়ে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে যে নির্মূলের নীতি অবলম্বন করেছে, এই রায় সেটিরই ধারাবাহিকতা। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এই রায় ঘোষণার ঘটনা শুধু অবান্তর ও হাস্যকরই নয়, এটি একটি সুদুরপ্রসারী মাষ্টারপ্ল্যানেরই অংশ।’
২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সকাল ১০টায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষণের শিকার স্ত্রীকে দেখতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে যান। সেখান থেকে যশোরে ফিরে যাওয়ার পথে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা কলারোয়ায় দলীয় অফিসের সামনে একটি যাত্রীবাহী বাস (সাতক্ষীরা-জ-০৪-০০২৯) রাস্তার ওপরে আড় করে দিয়ে তার গাড়িবহরে হামলা চালায়। হামলায় আওয়ামী লীগের এক ডজন নেতা-কর্মী আহত হন। এ ঘটনায় করা মামলায় ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তালা-কলারোয়ার বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জন নেতা-কর্মীকে চার থেকে ১০ বছর মেয়াদে সাজা দেন সাতক্ষীরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবির। এ ছাড়া গত ১৪ জুন অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনের অপর দুটি মামলায় চার্জ গঠন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ এমরান সালেহ বলেন, গত ১০ এপ্রিল বিকেল ৩টায় জিয়া মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহমানকে সাদা পোশাকধারী আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এখন পর্যন্ত সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ করেও তার কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। এ নিয়ে তার পরিবারসহ সংশ্লিষ্ট সবাই গভীর উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় আছেন। স্বজনদের ধারণা-আইন শৃঙ্খলা বাহিনীই তাকে তুলে নিয়ে গেছে। অবিলম্বে তাকে প্রকাশ্যে আনার দাবি জানান তিনি।

