সিসিটিভি না থাকায় অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে

প্রান্তডেস্ক: রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় অপরাধীদের গ্রেপ্তার কিংবা আটক করতে গিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। আর অপরাধ ঘটানোর জন্য সেসব এলাকা বেছে নিচ্ছে অপরাধীরা।
সাধারণত রাত ও ভোরের সময়টাকে বেছে নেয় তারা। এ সময় সড়কে যান চলাচল কমে যায়। তখন মানুষ না থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে অপরাধ ঘটিয়ে সহজেই পালিয়ে যায় অপরাধীরা।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘটনাস্থলে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলে অপরাধী শনাক্ত এবং আইনের আওতায় আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তেমন বেগ পেতে হয় না। সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকলে ঘটনাস্থলের আশপাশের শতাধিক ফুটেজ পর্যালোচনা করে অপরাধী শনাক্ত করতে হয়। তদন্তের ক্ষেত্রেও বিষয়টি ব্যয়সাপেক্ষ ও সময় নষ্ট হচ্ছে বলে বলা হচ্ছে।
এসব বিষয় বিবেচনা করে রাজধানীকে পুরোপুরি সিসিটিভির আওতায় আনতে কাজ করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ডিএমপির এক কর্মকর্তা বলেন, অপরাধীরা অপরাধ করে সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকার চেষ্টা করে। সিসিটিভি কাভারেজ রয়েছে এমন জায়গা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে তারা। কাভারেজ নেই এমন জায়গা বাছাই করে চুরি-ছিনতাই, হত্যা, মারামারিসহ নানা ধরনের অপরাধ ঘটায়।
তারা বলছেন, ছিনতাইকারীর হাতে হত্যার শিকার ভুক্তভোগী, এমন বেশ কয়েকটি ঘটনার সমাধান করতে বেগ পেতে হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অপরাধী শনাক্ত হলেও অনেক সময় তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে কঠিন হয়ে পড়ছে। কিন্তু সাময়িক বিলম্ব হলেও তদন্ত এবং বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করে পরাধীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
ডিএমপি সূত্র বলছে, গুরুত্বপূর্ণ স্থান বিবেচনায় রাজধানীতে পাঁচ শতাধিক সিসিটিভি বসানোর পরিকল্পনা চলমান রয়েছে পুলিশের। আধুনিক প্রযুক্তির এসব ক্যামেরায় অপরাধী শনাক্তের ফেজ ডিটেক্টর, গাড়ির নম্বর প্লেট চিহ্নিত করার প্রযুক্তি, স্বয়ংক্রিয় অ্যালার্ম সিস্টেমসহ ১১ ধরনের সুবিধা থাকবে। এই ক্যামেরা প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো- পুলিশের ডিজিটাল টহল নিশ্চিত করা। আগে থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ডিএমপির উদ্যোগে প্রায় ৭০০-এর মতো সিসিটিভি বসানো ছিল।
এ ছাড়া রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, নিকেতন, বারিধারা ও ডিএইচএস এলাকায় এক হাজার ২০০ ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এগুলো অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখছে। ২০০৭ সালে রাজধানীর ৪৩টি পয়েন্টে ১৮৫টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের মধ্য দিয়ে কাজ শুরু করে ডিএমপি।
ডিএমপির মতিঝিল গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, ২০২১ সালের ৫ মে রাজধানীর কমলাপুর এলাকায় রিকশা করে যাচ্ছিলেন সবুজবাগ বৌদ্ধ মন্দিরের একজন নারী পরিচ্ছন্নতাকর্মী। ছিনতাইকারীরা ব্যাগ টান দিতে গেলে রিকশা থেকে পড়ে গিয়ে ওই নারীর মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থলে সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না। ঘটনার পরপরই একটি মামলা হয়। কয়েকজনকে আটক করা হয় এ ঘটনায়। ওই দিন সড়কে গাড়ির চাপ থাকায় আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ থেকেও আশানুরূপ ফল পায়নি তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, কিন্তু তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক কোনও জবানবন্দি দেয়নি। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে তথ্য সংগ্রহ চলমান রয়েছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ না থাকায় কিছুটা সময় লাগছে। এছাড়া সে দিন আশপাশের সড়কে গাড়ির চাপ থাকায় প্রাইভেটকারটি শনাক্ত করাও সম্ভব হয়নি।
এছাড়া, ২০২২ সালে ২৯ জুলাই রাজধানীর মিরপুরে রিকশাচালক লতিফ হাওলাদার হত্যার শিকার হন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সে সময় জানিয়েছিল ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে মৃত্যু হয় ওই রিকশাচালকের। ছিনতাইকারীরা গলায় ছুরি চালিয়ে অটোরিকশা ছিনিয়ে নেয়। ঘটনার পর মামলা দায়ের হলেও ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ না থাকায় এখন পর্যন্ত মামলাটির তেমন অগ্রগতি নেই।
পুলিশ জানিয়েছে, রাজধানীর হাতিরঝিল ও ধানমন্ডি লেক থেকে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্তে হত্যার বিষয় উঠে এলেও সিসিটিভি ফুটেজ এসব ঘটনায় অপরাধী শনাক্তে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ জানান, অপরাধী নিয়ন্ত্রণে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এলাকায় অনেক জায়গায় সিসিটিভি কাভারেজ নেই। অনেক সময় দেখা যায়, অপরাধীরা ওইসব জায়গা চিহ্নিত করে অপরাধ সংঘটিত করছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর কাজ অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সিসিটিভি রয়েছে। সেগুলোর ফুটেজ থেকে অপরাধীদের শনাক্ত করাও সম্ভব হচ্ছে।

