আজ নিউরোসার্জন রশিদ উদ্দিনআহমদ’র প্রয়াণ দিবস
প্রান্তডেস্ক:অধ্যাপক ডা. রশিদ উদ্দিন আহমদ (১৯৩৭ – ১৯ মার্চ ২০১৬) ছিলেন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত চিকিৎসক। চিকিৎসা শাস্ত্রে অনন্য সাধারণ অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে তাকে “চিকিৎসাবিদ্যায় স্বাধীনতা পুরস্কার” প্রদান করা হয়। তিনি তাঁর শুরুর দিনগুলিতে একজন ক্রীড়াবিদ ছিলেন এবং ২০০৭ সালে বাস্কেটবল বিভাগে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পান।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
ডা. রশিদ উদ্দিনআহমদ ১৯৩৭ সালে কক্সবাজারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা তৎকালীন বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসের ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। ১৯৪৬ সালে তাঁদের পরিবার ঢাকায় চলে আসে। আহমদ সেইন্ট গ্রেগরী উচ্চ বিদ্যালয় এবং নটর ডেম কলেজে পড়াশোনা করেন। এরপর ১৯৫৫ সালে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। তিনি ১৯৬০ সালে এমবিবিএস অর্জন করেন এবং অধ্যাপক আসিরুদ্দিনের অধীনে তার সার্জিকাল রেসিডেন্সির পর, ১৯৬৩ সালে স্কটল্যান্ডে যান ও সার্জারিতে বিশেষত্ব অর্জনের জন্য এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জিকাল নিউরোলজি বিভাগে ভর্তি হন। সেখানে তিনি নিউরোসার্জন ফ্রান্সিস গিলিংহমের তত্ত্বাবধানে ছিলেন।
কর্মজীবন
১৯৭০ সালের এপ্রিলে ডা. রশিদ উদ্দিনআহমদ ঢাকায় ফিরে আসেন এবং প্রথমে সহকারী সার্জন হিসাবে তারপর সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে নিউরোসার্জিকাল ইউনিট অব ইনস্টিটিউট অফ পোস্টগ্রাজুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চে (আইপিজিএমআর) কাজ করেন। একাত্তরের যুদ্ধের সময়, তিনি এডিনবার্গে চলে আসেন এবং ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের বেশ কয়েকটি হাসপাতালে প্রথমে সিনিয়র রেজিস্ট্রার এবং তারপরে পরামর্শক নিউরোসার্জন হিসাবে কাজ করেছিলেন। ১৯৭৬ সালে তিনি স্থায়ীভাবে ঢাকায় ফিরে আসেন এবং ১৯৭৯ সালে আইপিজিএমআরে নিউরোসার্জারির অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং পরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে পরামর্শক নিউরোসার্জন হিসাবে যোগ দেন। ১৯৯৯ সালে আইপিজিএমআরকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রুপান্তরিত হলে তিনি নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮৭ সালে তিনি বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউরোসায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক (এবং পরবর্তীকালে প্রেসিডেন্ট) হন। তারপর ১৯৯৮ সালে, তিনি বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউইরোসার্জনসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন। তিনি ২০১২ সালে জাতীয় স্নায়ুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছিলেন। তিনি এশিয়ান কংগ্রেস অব নিউরোলজিকাল সার্জনস (এসিএনএস) এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। তিনি সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ নিউরোলজিকাল সোসাইটির দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট, এশিয়ান অস্ট্রালাসিয়ান সোসাইটি অব নিউরোলজিকাল সার্জনসের সন্মানিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
তিনি পূর্ব পাকিস্তান জাতীয় বাস্কেটবল দলের প্রথম অধিনায়ক ছিলেন। ১৯৮৯ সালে, তিনি ডেভিস কাপের জন্য বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবন
ডা. রশিদ উদ্দিন আহমদ ১৯৬৬ সালে কামরুন নাহারকে বিয়ে করেন। তাদের এক কন্যা, রাশিদা এবং এক পুত্র রেজা ছিল। আহমদের ভাই, গিয়াসউদ্দিন আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ছিলেন যিনি ১৯৭১ বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন।
মৃত্যু
২০১৬ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে ডা. রশিদ উদ্দিন আহমদ অচেতন অবস্থায় মহাখালীস্থ মেট্রোপলিটন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন এবং এখানেই ১৯ মার্চ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন।
পুরস্কার ও সম্মাননা
চিকিৎসা ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের “সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার” হিসাবে পরিচিত “স্বাধীনতা পুরস্কার” লাভ করেন।