লিবিয়ায় নিখোঁজ ২.৫ টন ইউরেনিয়াম পাওয়া গেছে
প্রান্তডেস্ক:লিবিয়ার একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী দাবি করেছে, দক্ষিণ লিবিয়া থেকে ড্রামভর্তি যে আড়াই টন প্রাকৃতিক ইউরেনিয়াম হারিয়ে গিয়েছিল সেগুলোর তারা পেয়েছে।
স্বঘোষিত লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির (এলএনএ) মুখপাত্র খালেদ আল মাহজৌব এক ফেইসবুক পোস্টে বলেছেন, যে গুদামে ইউরেনিয়ামের ড্রামগুলো রাখা হয়েছিল সেখান থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে সেগুলো পেয়েছে তারা।
সিএনএন জানিয়েছে, মাহজৌবের পোস্ট করা এক ভিডিওতে দেখা গেছে, নিখোঁজ ইউরেনিয়ামগুলো সেগুলোতে আছে বলে দাবি করা নীল রঙের ১৮টি ড্রাম শব্দ করে গুণে দেখছেন সুরক্ষা পোশাক পরা এক ব্যক্তি।
অপরদিকে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) বুধবার জানিয়েছিল, জমাট বাঁধা ইউরেনিয়াম আকরিক (ইউওসি) অবস্থায় ‘১০টি ড্রামে’ রাখা প্রায় আড়াই টন প্রাকৃতিক ইউরেনিয়াম খোয়া গেছে। মঙ্গলবার আইএইএ এর পরিদর্শকরা তদরকি করতে যাওয়ার পর বিষয়টি ধরা পড়ে বলে জানিয়েছিল তারা।
এলএনএ যেগুলো পেয়েছে সেগুলোই আইএইএ এর উল্লেখ করা হারানো ড্রামগুলো কিনা তা নিশ্চিত করতে সিএনএন জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থাটির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল।
বৃহস্পতিবার আইএইএ বলেছে, “উপাদানগুলো পাওয়া গেছে গণমাধ্যমের এমন প্রতিবেদনের বিষয়ে জ্ঞাত আছি আমরা।”
লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে কড়া প্রহরাধীন এক গুদামে ইউরেনিয়ামের ড্রামগুলো রাখা ছিল। ফেইসবুক পোস্টে মাহজৌব জানান, তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ছড়াতে পারে উদ্বেগে গুদামের ওই রক্ষীদের কিছুটা দূরে নিয়ে রাখা হয়েছিল।
গুদামের এক পাশে ড্রামের আকারের একটি কাটা অংশ পাওয়া গেছে বলে মাহজৌব জানিয়েছেন।
মাহজৌবের দাবি, ওই ড্রামগুলোতে অস্ত্র আছে এমন ধারণা করে শাদের একটি গোষ্ঠী সম্ভবত সেগুলো চুরি করেছিল, কিন্তু ভেতরে কী আছে এটি ঠিকমতো বুঝতে না পেরে সেগুলো ফেলে চলে যায় তারা।
তবে তাদের এ দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেয়নি এলএনএ।
তারা আরও জানিয়েছে, আইএইএ ২০২০ সালে গুদামটি পরিদর্শন করে ড্রামগুলোতে ইউরেনিয়াম আছে বলে চিহ্নিত করে রেখেছিল, তারপর থেকে গুদামটি পাহারা দেওয়ার জন্য ওই বাহিনীগুলোকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
আইএইএ জানিয়েছিল, খোয়া যাওয়া ইউরেনিয়ামগুলো থেকে ‘বিকিরণজনিত বিপদ তেমন একটা না থাকলেও সেগুলো ঘাঁটাঘাটির সময় সুরক্ষিত থাকা দরকার’।
বুধবারের বিবৃতিতে আইএইএ বলেছিল, “পারমাণবিক উপাদানের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে অজ্ঞতা তেজস্ক্রিয় বিকিরণের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, পাশাপাশি পারমাণবিক নিরাপত্তা উদ্বেগও তৈরি করে।”
২০০৩ সালে লিবিয়ার তৎকালীন নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি তাদের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচী বন্ধ করে দেন। তখন লিবিয়া সেন্ট্রিফিউজ সংগ্রহ করেছিল যেগুলো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি একটি পারমাণবিক বোমার নকশার তথ্যও দিতে পারতো। কিন্তু বোমা তৈরির ক্ষেত্রে লিবিয়া তেমন একটা অগ্রসর হতে পারে নাই।
২০১১ সালে নেটোর সমর্থনে হওয়া গণঅভ্যুত্থানে গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত ও নিহত হওয়ার পর থেকে লিবিয়ায় অস্থিরতা বিরাজ করছে। ২০১৪ সাল থেকে দেশটির রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ পূর্ব-পশ্চিমের প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বিভক্ত হয়ে আছে। ২০২০ সালে এসব পক্ষগুলোর মধ্যে শেষ বড় যুদ্ধ হয়।
জাতিসংঘের শান্তি পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালের প্রথমদিকে লিবিয়ায় একটি অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয় এবং তাদের ওই বছরের ডিসেম্বর নির্বাচন আয়োজন করে সরে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ওই নির্বাচন আর অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এ সরকারের বৈধতাও বিতর্কিত হয়ে পড়েছে।