প্রান্তডেস্ক: চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিপুল পরিমাণ তৈরি পোশাক রপ্তানি হচ্ছে, তবে অর্থ আসছে না দেশে-সম্প্রতি এমন একটি তথ্য খতিয়ে দেখতে মাঠে নামেন কাস্টমস গোয়েন্দারা।
প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে ঢাকার সাবিহা সাইকি ফ্যাশনের নামে রপ্তানি হয়েছে ৮৬টি চালান। যাতে তৈরি পোশাক ছিল ১ হাজার টন। মূল্য ১৮ লাখ ৪৬ হাজার ডলার। যদিও এসব পণ্য রপ্তানি করেনি বলে দাবি করে প্রতিষ্ঠানটি।
এরপর ব্যাপক তদন্তে নামে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়। যাতে মেলে আরও ভয়াবহ তথ্য। উঠে আসে আরও ৩টি প্রতিষ্ঠানের নাম। যার অন্যতম এশিয়া ট্রেডিং করপোরেশন। গেল ১ বছরে যাদের নামে পাচার হয়েছে ১৩শ ৮২টি চালান। পণ্য ছিল ১৪ হাজার ৮৫টন। যার মূল্য ২ কোটি ৭৮ লাখ ২৬ হাজার ৮৬৬ ডলার। আরেকটি প্রতিষ্ঠান ইমু ট্রেডিং কোম্পানি। তাদের নামে ২শ ৭৩ চালানে পাচার হয়েছে ৬৫ লাখ ৪ হাজার ৯৩২ ডলার মূল্যের ২৫শ ২৩ টন পোশাক। আর ইলহামের নামে ৩৯ চালানে গেছে ৬শ ৬০ টন পোশাক। দাম ১৬ লাখ ৩৯ হাজার ডলার। কিন্তু রপ্তানিকারক হিসেবে নাম আসা এসব প্রতিষ্ঠানেরও দাবি, তারা কিছুই জানে না।
তাহলে জানে কে? এর জবাব খোঁজার চেষ্টা করে চ্যানেল টোয়েন্টিফোর। নথিপত্রে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট লিম্যাক্স শিপার্স। প্রতিষ্ঠানটির মালিক সরফরাজ কাদেরের দাবি, দীর্ঘদিন কাজ না থাকায় কর্মচারী ওবায়েদের মাধ্যমে অন্য এক ব্যক্তিকে লাইসেন্সটি সচল রাখার দায়িত্ব দেয়া হয়। তৃতীয় এই ব্যক্তিই জালিয়াতি করেছে, যা তাদের জানা ছিল না।
ওবায়েদের দাবি, সামিম আহমেদ নামে এক ব্রোকারের আগ্রহে লাইসেন্সটি দেয়া হয়েছিল। যিনি একসময় ওসিএল ডিপোতে চাকরি করতেন। তথ্য বলছে, আগে থেকেই এমন অপকর্মের রেকর্ড আছে শামীমের। ২০১৩ সালে ওসিএলে চাকরিতে থাকাকালে ধরা পড়ে চুরির ঘটনা।
নগরের বারিক বিল্ডিংয়ে সামীমের অফিসে গিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। মাসখানেক ধরে গা ঢাকা দিয়ে আছে সামিম। সরিয়ে ফেলেছে সাইনবোর্ডও। শামীমের সহযোগী হিসেবে মিলেছে কাস্টম সরকার রাসেল ও সাকিলের নাম।
অনুসন্ধান বলছে, জালিয়াতি হয়েছে ঘাটে ঘাটে। বিল অব এক্সপোর্টে দিনের পর দিন ব্যবহার করা হয়েছে ভূয়া এলসি আর ইএক্সপি নম্বর। এছাড়া, কোনক্ষেত্রে রপ্তানিকারক এক ব্যাংকের গ্রাহক। আর এলসি এবং ইএক্সপি অন্য ব্যাংকের। অথবা রপ্তানিকারক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকেরই গ্রাহক। কিন্তু ব্যবহার করা হয়েছে অন্য গ্রাহকের এলসি আর ইএক্সপি নম্বর।
বিল অব এক্সপোর্টের হার্ডকপি আর কাস্টমসের সার্ভারের তথ্যেও মিলেছে বিরাট ফাঁরাক। যার অন্যতম রপ্তানিকারকের নামের ভিন্নতা। গরমিল আছে ন্যাচার অব ট্রানজেকশন, সিপিসি কোড আর ইউডিতেও।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, নিজস্ব লোক রাখার প্রবণতা আছে কাস্টমস কর্মকর্তাদের মধ্যে। এদেরই বেশিরভাগ লোক এইসব জালিয়াতির মধ্যে জড়িত হয়ে যায়।
এদিকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার মুহম্মদ মাহফুজ আলম বলেন, অনেক সময় অনেক কর্মকর্তা সচেতন থাকে না। অনেক কাজ করতে হয়, হয়তো মিসইউজ হতে পারে।তদন্তে এই অপতৎপরতার নেপথ্যে উঠে এসেছে অর্থ পাচারের বিষয়টি। যা সুনিপুণ জালিয়াতির কারণে থেকেছে নজরদারির বাইরে।এসব পণ্য গেছে আরব আমীরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কাতার, যুক্তরাজ্য, নাইজেরিয়ায়। যাতে সবমিলে এখন পর্যন্ত মিলেছে ৩শ ৭৯ কোটি টাকা পাচারের তথ্য।