সরকার জনগণের পকেট কেটে নিচ্ছে : সিলেটে মির্জা ফখরুল
প্রান্তডেস্ক: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশের অর্থনীতি, বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগণের পকেট কেটে টাকা নিচ্ছে।সরকার দেশনত্রী খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে, বেআিইনিভাবে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে গৃহবন্দি করে রেখেছে । এর পূর্বে তাঁকে কারান্তরীণ করে রাখা হয়েছিল চার বছর।’
সিলেট মহানগর বিএনপির সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় মহানগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠে এই সম্মেলন শুরু হয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে। আন্দোলনে আমাদের ১৭ জন নেতা-কর্মী রাজপথে প্রাণ দিয়েছেন। শত শত নেতা-কর্মীকে আহত করা হয়েছে। হাজারো নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারপরও তারা কী পেরেছে আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে? পারেনি বন্ধুগণ। আজকে আরও দুর্বার গতিতে মানুষ জেগে ওঠেছে। এবং জেগে ওঠেছে একটিমাত্র লক্ষ্যে, যেভাবেই হোক এই দানবীয় সরকার, যারা আমাদের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়েছে, তাদেরকে পরাজিত করতে হবে। তাদেরকে বিতাড়িত করতে হবে, পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে, বন্ধুগণ।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়েছে। এমনভাবে ধ্বংস করেছে, যেটাকে টেনে অত্যন্ত তোলা কঠিন। আজকে শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থে, দুর্নীতির স্বার্থে, চুরি করার স্বার্থে তারা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ফোকলা করে দিয়েছে। তারা অনেক বড় বড় কথা বলে, তারা নাকি অনেক উন্নয়ন করেছে। এই উন্নয়নটা কার জন্যে? এই উন্নয়ন গুটিকতক মানুষের জন্য। তারা পাতাল রেল করছে, মেট্রোরেল করেছে, কতো টাকা খরচ হয়েছে? যা খরচ হওয়ার কথা তার চেয়ে তিনগুণ খরচ করেছে। পদ্মাসেতু করে খুব বাহবা নেয় তারা। সেই পদ্মাসেতু বানাতে ১০ হাজার কোটি টাকা ছিল বাজেট, তার প্রকল্প, যেটা আমাদের সময় করা হয়েছিল ১০ হাজার কোটি টাকার মতো। সেটা আজকে ৩০ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। চট্টগ্রামে টানেল তৈরি করেছে, যে টানেলের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা আমরা জানি না। অথচ হাসপাতালে আমার রোগীরা ঠিকমতো বেড পায় না, ওষুধ পায় না, তারা ডাক্তার পায় না। হাসপাতালে ঢোকার মতো কোনো পরিবেশ থাকে না। আজকে স্বাস্থ্যসেবার জন্য বেশিরভাগ মানুষকে বাইরে চলে যেতে হচ্ছে, ভারতে যেতে হচ্ছে, দেশে কোনো চিকিৎসা পাওয়া যায় না বন্ধুগণ।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। আজকে প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় আওয়ামী সন্ত্রাসী, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। আপনারা দেখুন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কতো খারাপ হয়েছে। প্রকাশ্যে দিনের বেলায় চড়-থাপ্পড় মেরে ১১ কোটি টাকা নিয়ে যায়! পরে আবার ওরাই খোঁজে পায়, তার মধ্যে আবার দুই কোটি টাকা পাওয়া যায় না! আইনশৃঙ্খলা এমন খারাপ হয়েছে, আজকে আমাদের মা-বোনদের নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নাই। তারা নিরাপদ বোধ করেন না এই দেশে। আজকে কোথাও কোনো আইনের শাসন নেই।’
তিনি বলেন, ‘বিদ্যুতের দাম এতো বাড়তো না, যদি চুরি বন্ধ করা যেতো। আজকে তাদের বিশেষজ্ঞরাই বলছেন, এটা হচ্ছে বাস্তব কথা।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধিতে একেবারে অসহায় হয়ে পড়েছে। কথা দিয়েছিল, তারা ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেবে। ১০ টাকা কেজি দরে চাল খেতে পারেন এখন? না, ৭০ টাকা কেজি মোটা চাল এখন। এখন পত্রিকায় দেখলাম, মিহি চাল যেটা সেটা ১৭০ টাকা! ডালের দাম বেড়েছে, তেলের দাম বেড়েছে। ডিম সাধারণ মানুষের প্রোটিনের উৎস, সেটার দাম তিন-চারগুণ বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে এক লাফে ৬০ টাকা। মানুষ কোথায় যাবে? এরকম একটা অবস্থা এই সরকার তৈরি করেছে। আর তাদের কথার বাগাড়ম্বর যে এখন নাকি দেশ সবচেয়ে ভালো আছে। তারাই নাকি আসলে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়। আরে উন্নয়ন ধুয়ে খাবে মানুষ, যদি ভাত খেতে না পারে? আর কোথায় উন্নয়ন? উন্নয়ন হলে তো কর্মসংস্থান থাকতো। বলেছিল ঘরে ঘরে চাকরি দেবে, চাকরি পায়? সরকারি হিসেব মতে প্রায় তিন কোটি বেকার।’
ঢাকা ও চট্টগ্রামে সম্প্রতি তিনটি বিস্ফোরণ ও বেশ কয়েকজন নিহতের ঘটনা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই প্রাণের কী কোনো মূল্য নেই? কাদের জন্য এরা মারা যাচ্ছে? তাদের বিচার করতে হবে। সরকারের ব্যর্থতা, তাদের ডিপার্টমেন্টগুলোর ব্যর্থতা, যারা দায়িত্বে আছেন তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।’তখন নেতা-কর্মীরা ‘না’ বলে আওয়াজ দেন।এরপর মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার একটা ভয়ের রাজত্ব, ত্রাসের রাজত্ব তারা তৈরি করেছে।’