জাতীয় সম্পদ রক্ষায় ঐক্যের প্রয়োজন
গিয়াসউদ্দিন আউয়াল:: মায়ের ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্র্রীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে বাহান্নর ভাষা আন্দোলনে বাংলার দামাল ছেলেরা হাসিমুখে জীবন দিয়েছে। বুকের তাজা রক্তে রাজপথ করেছে রঞ্জিত। ভাষার দাবিতে বিশ্বের আর কোন জাতি প্রাণ দেয়নি। আজ সেই প্রাণের ভাষা বাংলা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষারূপে সারা বিশ্বে স্বীকৃত। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি,/আমি কি ভুলিতে পারি’ কালজয়ী অমর একুশের গানে প্রভাতফেরির মাধ্যমে একযোগে সমগ্র বিশ্বে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ইহা বাঙ্গালি জাতির অহংকার। গর্ব ও শ্লাঘার বিষয়। সম্প্রতি বাঙালি জাতির আবেগ, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রতীক সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ টাকার বিনিময়ে বিধিবহির্ভূতভাবে ভাড়া প্রদানের হটকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ‘টেনপার্সেন্ট’খ্যাত বিএনপি দলীয সিলেট সিটি কর্পোরেশনের(সিসিক)মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। একইসাথে তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের অভ্যন্তরে বানিজ্যিক স্হাপনা নির্মাণেরও ধৃষ্টতা দেখিয়ে চলেছেন। সিলেটের সামাজিক-সাংস্কৃতিক, গণতান্ত্রিক কর্মকান্ডকে কলুষিত ও সংকুচিত এমনকি নিশ্চিন্ন করার ঘৃণ্য পাঁয়তারায় লিপ্ত রয়েছেন তিনি। কোন জাতিকে ধ্বংস করতে হলে প্রথমেই আঘাত হানতে হয় তার ভাষা, শিক্ষা, সাহিত্য- সংস্কৃতি ও কৃ্ষ্টির উপর। আর এই কাজটি অতি সুক্ষতার সাথে যুগের পর যুগ ধরে করে আসছে পাকিস্তান প্রেমিক বিএনপি-জামায়াত চক্র। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে মেয়র তার দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের কাজটিই করে চলেছেন। আজপর্যন্ত তার দল বিএনপি এবং তাদের দোসর জামায়াতে ইসলাম বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে নির্লজ্জের মতো অস্বীকার করে চলেছে। শহীদ মিনার ও শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ বাঙ্গালি জাতির আত্ম অহংকার। জাতির প্রাণভ্রমরা। হৃদ স্পন্দন। এই হৃদস্পন্দনের ক্রিয়া বন্ধ করে জাতির প্রাণভ্রমরার প্রাণসংহার করার অধিকার সিসিক মেয়রকে কেউ দেয়নি। কার স্বার্থে তিনি এই জঘন্য কাজ করছেন সিলেটবাসী তথা জাতি জানতে চায়। দাবি আদায় করতে গিয়ে দাবি মানতে হবে, এটা চাই, ওটা চাই; এটি করতে হবে, ওটি করতে হবে বলে গলা ফাটিয়ে চিল্লালে চলবে না। দাবি প্রাপ্তি ও চাওয়াটাকে জোর করে আদায় করতে হবে। কান টানলে মাথা আপনা থেকেই আসবে। নীতি-নৈতিকতার দিক থেকেও সিসিক মেয়র তার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছেন। অতএব, যে-কোন মূল্যে মেয়রের সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের সমুচিত জবাব দেওয়া সিলেট তথা দেশের প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সকল শ্রেণীপেশার দেশপ্রেমী সচেতন নাগরিকের জাতীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য। জাতীয় স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যের বিকল্প কিছু নেই। একইসাথে ঐতিহ্যের স্মারক শহীদ মিনার ও শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের মান-মর্যাদা রক্ষায় সরকারকেই নিতে হবে বাস্তব পদক্ষেপ। মনে রাখতে হবে হিংস্র প্রাণী ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে থাকে।সুযোগ পেলে দেয় থাবা। চেষ্টা করে খাবলে খাওয়ার। একইভাবে ঘাপটি মেরে বসে থাকা সেই ‘টেপার্সেন্ট’ মহাশয়রা ধান্ধা জারি রাখতে ওঁৎ পেতে বসে আছে। এদিকে আন্দোলন-সংগ্রাম যখন বেগবান হতে চলেছে, তখনই সিসিক মেয়র “সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান নিয়ে বিভ্রান্তির কোন সুযোগ নেই” বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন। মেয়র মহোদয় দয়া করে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ ভাড়া দেওযা এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের পবিত্রতা নষ্ট করে বানিজ্যিক স্হাপনা নির্মাণ থেকে বিরত থাকুন। ‘টেনপার্সেন্ট’ কামানোর আরো বহু জায়গা আছে। ভুলেও এই অপকর্মে হাত বাড়াবেন না। আপনি নিজেও জানেন পবিত্র ভূমি সিলেটের মানুষ যতটা সহজ সরল, ভদ্র-নম্র ঠিক ততটাই কঠিন। আর হ্যাঁ, বিভ্রান্তি আন্দোলনকারীরা ছড়াচ্ছে না।ছড়াচ্ছেন আপনি। আন্দোলনকারীদের বিপথগামী করার জন্য আপনি জেনে-বুঝে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কাজটি করে চলেছেন। ছলচাতুরীর আশ্রয়ে এই হীন চক্রান্তকে আড়াল করতে পারবেন না। উপরন্তু, স্পর্ধা যত দেখাবেন, আন্দোলনকারীদের শক্তি ও সাহস ততই বাড়তে থাকবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে এই পাপ কাজ থেকে সরে আসুন। এতে আপনার মঙ্গল ছাড়া ক্ষতি হবে না। অশুভ শক্তি নিপাত যাক। জয় হোক দেশপ্রেমী সংগ্রামী সিলেট তথা দেশবাসীর।