আসল জামায়াতুল আনসারের নেতা কে? আসল জামায়াতুল আনসারের নেতা কে?
প্রান্তডেস্ক:পাহাড়ের সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ছত্রছায়ায় প্রশিক্ষণ নেওয়া নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র নেতৃত্ব নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট এবং র্যাবের দুই রকম তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
সংগঠনের নেতা কে, নামকরণ কবে- এসব নিয়েও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুটি ইউনিটের তথ্য দুই রকম।
র্যাব বলছে, জামায়াতুল আনসারের শুরু ২০১৯ সালে, নামকরণ তখনই। আর সিটিটিসি বলছে, ২০২২ সালের জানুয়ারির পর এই নামকরণ করা হয়।
সিটিটিসি বলেছে, আগাগোড়াই এ সংগঠনের ‘প্রধান ব্যক্তি’ হলেন গাইবান্ধার শামীম মাহফুজ। অন্যদিকে র্যাব বলছে, এ সংগঠনের ‘প্রধান ব্যক্তি’ বা আমির হচ্ছেন কুমিল্লার আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ। শামীম মাহফুজ এই সংগঠনের ছয় নম্বর শুরা সদস্য।
দুদিন আগে চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার চার তরুণ জামায়াতুল আনসারের সদস্য জানিয়ে তাদের কাছ থেকে পাওয়া একটি ভিডিওর বিষয়ে বৃহস্পতিবার রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব।
এ বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, “ভিডিওতে সংগঠনের প্রধান বা আমির আনিসুর রহমান মাহমুদ এবং দাওয়াতী শাখার প্রধান আব্দুল্লাহ মাইমুনকে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। তারা ওই ভিডিও বক্তব্যের মাধ্যমে সংগঠনের সদস্য ও অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করছিলেন।”
সিটিটিসি যে শামীম মাহফুজকে সংগঠনের প্রধান হিসেবে বর্ণনা করেছে, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে র্যাবের মুখপাত্র বলেন, “আপনারা হয়ত ভুল শুনেছেন। সিটিটিসি কখনও বলে নাই যে শামীম মাহফুজ এই সংগঠনের আমির। উনি (শামীম) পাহাড়ে প্রশিক্ষণের বিষয়ে প্রধান সমন্বয়কারী।
“আনিছুর রহমান মাহমুদই এই সংগঠনের প্রধান। এর আগে মাইনুল ইসলাম রক্সি যখন সংগঠনটির প্রধান ছিলেন, তখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংগঠনটির বিষয়ে জানত না। রক্সি গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০২২ সালে সংগঠনটির নিয়ম অনুযায়ী আনিছুর রহমান মাহমুদকে আমির নির্বাচিত করা হয়।”
তবে গত ২৭ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান জানান, গোড়া থেকেই হিন্দাল শারক্বীয়ার প্রধান শামীম মাহফুজ ওরফে ‘স্যার’। জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে এর আগে তিনবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন শামীম, এখন তিনি পলাতক।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি আরেকটি সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান বলেন, “এই জঙ্গি সংগঠনের প্রধান ব্যক্তি শামীম মাহফুজের নির্দেশে একটি কমিটি হয়। এই কমিটির প্রথম আমির ছিলেন রক্সি। শূরা কমিটিতে ছিলেন ছয়জন। রক্সি গ্রেপ্তারের পর শূরা কমিটির সদস্য আনিসুল ইসলাম ওরফে তমালকে আমির ও মহিবুল্লাহকে নায়েবে আমির নিযুক্ত করা হয়।”
গত ২৭ অক্টোবর সিটিটিসির এক বিজ্ঞপ্তিতেও শামীম মাহফুজকে জামায়াতুল আনসারের ‘মূল নেতা’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। বলা হয়, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে একদিন নামাজের পরে শামীম মাহফুজ এবং আমির ওরফে আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ ‘জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র নাম ঘোষণা করেন।
তবে র্যাব মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন বলেন, “শামীম মাহফুজ পাহাড়ে তার সংগঠনের সদস্যদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পেরেছিলেন। এ জন্য তিনি দলে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে ছিলেন। তবে তিনি কখনও দলের নেতা নন। প্রশিক্ষণ শিবিরের যাবতীয় দায়িত্ব ছিল তার ওপর।
“আনিসুর রহমান মাহমুদ যে দলের নেতা এ বিষয়টি তারাও ভালোভাবেই জানেন। তাদের ভাষ্যেও কিন্তু তার নামের আগে আমির নামটি তারা রেখেছেন। কিন্তু সেটি তার নাম নয়, পদ।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য বলছে, ৩২ বছর বয়সী আনিসুর রহমান মাহমুদের বাড়ি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার হরকল গ্রামে। তার বাবার নাম মোখলেছুর রহমান।
স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে হাফেজি পড়া শেষ করে সেখানেই একটি সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনে কাজ করা শুরু করেন তিনি। ২০২১ সালে পৈত্রিক কিছু সম্পদ বিক্রি করে হঠাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে যান।
র্যাব বলছে, আনিসুর তার বাড়ি থেকে আনা টাকা সংগঠনে দিয়েছেন।
অন্যদিকে গাইবান্ধার সাঘাটার ৪৭ বছর বয়সী শামীম মাহফুজ ১৯৯২ সালে রংপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি ও ১৯৯৪ সালে এইচএসসিতে পাস করেন। দুই পরীক্ষাতেই মানবিক বিভাগ থেকে স্ট্যান্ড করেন তিনি। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তার বন্ধুত্ব হয় নাথান বমের সঙ্গে, যিনি এখন পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী দল ‘বম পার্টি’র প্রধান।
মাস্টার্সের পরে রাজধানীর একটি কলেজে কিছুদিন শিক্ষকতা করেছিলেন শামীম। এরপর শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে।
খন্দকার মঈন জানান, শিক্ষকতার কারণেই জঙ্গি সংগঠনে ‘স্যার’ হিসেবে পরিচিতি পান শামীম।
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সময় তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডিতে ভর্তি হন। গবেষণার বিষয় ছিল ‘পাহাড়ি জাতি-গোষ্ঠী’।
গবেষণার অংশে হিসেবে তখন থেকে শামীম পাহাড়ে যেতেন। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা দোছড়ি ইউনিয়নে তিনি লেবু বাগান করার জন্য জমিও কিনেছিলেন।
তবে গবেষণা ও খামারের আড়ালে ‘উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে’ যুক্ত থাকার অভিযোগে ২০১১ সালে বান্দরবানের থানচি থানার একটি মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হন। জামিনে মুক্তি পান দুই বছর পর।
পরের বছর তিনি আবার গ্রেপ্তার হন রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে। হাই কোর্টের আদেশে জামিনে মুক্তি পান ২০১৭ সালে। তখন থেকেই তিনি সস্ত্রীক নিখোঁজ।(সৌজন্যে:দৈনিক সংবাদ)