গড় আয়ু কমছে: শব্দদূষণ রোধে ১৪টি সুপারিশ
প্রান্তডেস্ক: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুসারে আবাসিক এলাকায় শব্দের গ্রহণযোগ্য সর্বোচ্চ মাত্রা ৫৫ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায় ৭০ ডেসিবেল। কিন্তু ঢাকা শহরের অধিকাংশ এলাকায়ই গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি শব্দ হচ্ছে, যা ৬০ ডেসিবেলের ওপর। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আইন থাকলেও তা মানা হয় না। ফলে অধিক শব্দদূষণে রাজধানীবাসীর গড় আয়ু ৭ বছর কমে যাচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিশ্ব শ্রবণ দিবস উপলক্ষে স্পিচ এন্ড হিয়ারিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বিশেষজ্ঞরা। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) পরিচালিত এই সমীক্ষা তুলে ধরে শব্দদূষণ রোধে ১৪টি সুপারিশ করেছে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন স্পিচ এন্ড হিয়ারিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। বক্তব্য রাখেন- জাতীয় নাক, কান, গলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. জাকারিয়া সরকার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাক, কান, গলা বিভাগের অধ্যাপক ডা. জহুরুল হক, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক, কান, গলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ।
শব্দদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে তথ্যউপাত্ত তুলে ধরে দূষণ রোধে ১৪টি সুপারিশ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মীর মোশারফ হোসেন। তিনি বলেন, রাজধানীর ১০টি স্থানে ৮২ শতাংশ সময় ৬০ ডেসিবেলের ওপর শব্দের মাত্রা পাওয়া গেছে। ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত ঢাকা শহরের ১০টি স্থানের শব্দের তথ্যউপাত্ত বিশ্লেষণ করে এসব জানা যায়। শব্দদূষণ রোধে তাদের সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- হাইড্রলিক হর্ন বন্ধ করা, উচ্চ শব্দে কর্মরতদের এয়ার প্লাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা, সব পাঠ্যসূচিতে শব্দদূষণ রোধের সচেতনতামূলক পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা, পাবলিক জায়গায় মাইক কিংবা স্পিকার ব্যবহারে শব্দের মাত্রা ৫৩ ডেসিবেলের মধ্যে রাখার জন্য আইন প্রণয়ন, শব্দদূষণ রোধে ট্রাফিক পুলিশকে ক্ষমতা দেয়া, বিভিন্ন উৎসবে আতশবাজির ব্যবহার নিষিদ্ধ করা ও প্রতিটি উপজেলায় প্রত্যেক মানুষের শ্রবণশক্তি পরীক্ষা করে সঠিক চিকিৎসা দেয়া।
অধ্যাপক ডা. মো. জাকারিয়া সরকার বলেন, ঢাকার অধিকাংশ স্থানে ৬০ ডেসিবেলের ওপর শব্দের মাত্রা। পৃথিবীর সবচেয়ে শব্দদূষণপ্রবণ এলাকা ঢাকা। শব্দদূষণ প্রতিরোধ আইনে থাকলেও এর প্রয়োগ নেই।
শুধু আইন প্রয়োগ করে শব্দদূষণ রোধ করা সম্ভব নয় মন্তব্য করে অধ্যাপক ডা. জহুরুল হক বলেন, কান বাদ দিয়ে যেমন শ্রবণ হয় না, তেমনি কানে না শুনলে মানুষ কথাও বলতে পারে না। তাই শব্দদূষণ রোধে আমাদের সচেতন হওয়ার পাশাপাশি সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
শব্দদূষণ প্রতিরোধ আইনে ত্রæটির কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ বলেন, ২০০৬ সালের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ আইনে নীরব জোন, আবাসিক জোন, বাণিজ্যিক জোন ঠিক করা হয়েছে। কিন্তু পাশাপাশি জায়গায় আবাসিক ভবন, বাণিজ্যিক ভবন ও শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। চাইলেই ঢাকায় জোন ভাগ করা সম্ভব নয়। শব্দদূষণের কারণে ঢাকায় মানুষের গড় আয়ু ৭ বছর এবং ঢাকার বাইরের মানুষের ৫ বছর দুই মাস কমে যাচ্ছে। তাই শব্দদূষণ রোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে।