জাপানি মা, বাংলাদেশি বাবাকে সন্তানের ভবিষ্যৎ আদালতের বাইরে নিষ্পত্তির পরামর্শ
প্রান্তডেস্ক: জাপান থেকে আসা দুই শিশু সন্তানের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় নিয়ে তাদের মা জাপানের নাগরিক এরিকো এবং বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফকে আদালতের বাইরে বসে নিষ্পত্তির পরামর্শ দিয়েছেন আদালত।
দুই সন্তানকে নিজ হেফাজতে নিতে ইমরান শরীফের করা আপিল আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এএইচএম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া এ পরামর্শ দেন।
এদিন উচ্চ আদালতে একই বিষয়ে শুনানি থাকায় আপিলকারী বাবা ইমরান শরীফের আইনজীবী শুনানি পেছানোর জন্য সময়ের আবেদন করেন। আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ২৪ মে শুনানির জন্য নতুন দিন ধার্য করেন আদালত।
নাকানো এরিকো এবং ইমরান শরীফ তাদের দুই শিশুর হেফাজত ও অভিভাবকত্ব চেয়ে ২০২১ সাল থেকে পালটাপালটি মামলা করে আসছেন। সর্বশেষ ২৯ জানুয়ারি ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান শিশুদের জিম্মা চেয়ে বাবা ইমরান শরীফের মামলা খারিজ করে রায় দেন।
পরদিন সেই রায়ের বিরুদ্ধে ইমরান শরীফ ঢাকা জেলা জজ আদালতে আপিল করেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি ইমরান শরীফের করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন আদালত। একই সঙ্গে দুই সন্তান কার সঙ্গে থাকবে, সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য দুই পক্ষের আইনজীবীদের উদ্যোগ নিতে বলেছিলেন।
২০০৮ সালে বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক ইমরান শরীফ (৫৮) ও জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো (৪৬) জাপানের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী বিয়ের পর টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিন কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। তারা তিনজনই টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের শিক্ষার্থী ছিল।
২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি এরিকোর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন ইমরান। ওই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়েকে (বড় ও মেজো) নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন তিনি। ছোট মেয়ে জাপানে আছে। এরপর মেয়েদের ফিরে পেতে একই বছরের ১৮ জুলাই বাংলাদেশে আসেন মা এরিকো। তাদের ফিরে পেতে ১৯ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। অন্যদিকে ছোট মেয়েকে ফিরে পেতে পৃথক রিট করেন ইমরান।
পৃথক রিটের ওপর শুনানি নিয়ে দুই শিশু তাদের বাবা ইমরানের হেফাজতে থাকবে বলে একই বছরের ২১ নভেম্বর হাইকোর্ট আদেশ দেন। এ আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন এরিকো; যা চেম্বার আদালত হয়ে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে।
এরিকোর করা আবেদন (লিভ টু আপিল) নিষ্পত্তি করে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। আদেশে বলা হয়, ঢাকার পারিবারিক আদালতে থাকা মামলাটি (২০২১ সালে শিশুদের বাবার করা) নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জাপান থেকে আসা দুই শিশু তাদের মায়ের হেফাজতে থাকবে। তবে শিশুদের বাবা তাদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন বলে আদেশে বলা হয়। আপিল বিভাগের আদেশের অনুলিপি পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট পারিবারিক আদালতকে মামলাটি নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
আদেশে আরও বলা হয়, মামলার পারিপার্শ্বিক বিষয় ও শিশুদের স্বার্থ বিবেচনায় তাদের এই আদালতের এখতিয়ারের বাইরে (দেশের বাইরে) নেওয়া যাবে না। তবে দুই সন্তানকে নিয়ে জাপানে যাওয়ার জন্য গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর গভীর রাতে রাজাধানী ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান এরিকো নাকানো। কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করায় তাকে বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয় পুলিশ।