প্রান্তডেস্ক: চট্টগ্রামে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া’র চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। মঙ্গলবার রাত সাড়ে এগারটার দিকে পটিয়া বাইপাস এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন- পটুয়াখালীর দশমিনা এলাকার হোসাইন আহমদ (২২), কুমিল্লা সদর এলাকার নিহাল আব্দুল্লাহ (১৯), একই এলাকার আল আমিন (২২) ও খুলনার ডুমুরিয়ার আল আমিন ওরফে পার্থ কুমার দাস (২১)। তাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন জঙ্গি তৎপরতার একটি ভিডিও কনটেন্ট উদ্ধার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার নিহাল একটি আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে দাবি র‌্যাবের। তারা বলছেন, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর তৎপরতার কারণে হামলা করতে পারেননি।  

বুধবার দুপুরে র‌্যাব-৭ এর বহদ্দার হাট ক্যাম্পে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আমাদের কাছে খবর আসে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অব্যাহত অভিযানের ফলে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা পাহাড়ে অনিরাপদবোধ করছিল। সংগঠনের বেশ কয়েকজন সদস্য তাদের আমীরের নির্দেশে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড় থেকে বের হয়ে সমতলে আত্মগোপনে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৭ চেকপোস্টসহ টহল বাড়িয়ে দেয়। চেকপোস্ট চলাকালীন সময়ে রাত সাড়ে এগারটার দিকে একটি সিএনজি অটোরিকশা থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের পেছনে আরো চার-পাঁচজন ছিল। যারা পালিয়ে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়,  গ্রেপ্তার জঙ্গিরা নিজেদের বন্ধু-বান্ধব ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া’য় যোগদান করেন। তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাথমিক প্রশিক্ষণের ধাপ সম্পন্ন করে পরবর্তী ধাপ হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য যান। সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্টের সহায়তায় অস্ত্র চালানো ও বিভিন্ন রণকৌশলের প্রশিক্ষণ তারা গ্রহণ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, গ্রেপ্তার হোসাইন আহমদ ২০২১ সালে সিরাজ নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে জামায়াতুল আনসারে যোগদান করেন। ওই বছরের নভেম্বরে জঙ্গি সংগঠনটির অর্থ শাখার প্রধান রাকিবের মাধ্যমে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে যান। গ্রেপ্তার আল আমিন ঢাকার একটি মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত ছিল। ২০২১ সালে একজন সহপাঠীর মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন। পরে এই জঙ্গি সংগঠনে যোগদান করেন। তিনিও নভেম্বরে প্রশিক্ষণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে যান। গ্রেপ্তার আল আমিন ওরফে পার্থ কুমার দাস তিনি একজন নও মুসলিম ছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। পরে ঢাকায় গিয়ে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করেন। সেখানে তার সঙ্গে সিরাজের পরিচয় হয়। সিরাজের মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনে যোগদান করেন। তাকে ধর্মীয় ভুল ব্যাখার মাধ্যমে এই সশস্ত্র প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়। তাকে বিদেশে পাঠানোরও প্রলোভন দেখানো হয়। এছাড়া কুমিল্লা থেকে স্বেচ্ছায় নিরুদ্দেশ হওয়া আটজনের একজন হলেন গ্রেপ্তার নিহাল আব্দুল্লাহ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, ২০২০ সালের শেষ দিকে স্থানীয় কুবা মসজিদের ইমাম হাবিবুল্লাহ’র মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন। বিভিন্ন সময় ঢাকা, ভোলা, পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন স্থানে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণের জন্য আসেন। ২০২২ সালে ২৩ আগস্ট স্বেচ্ছায় কথিত হিজরতের নামে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হন।একই বছরের সেপ্টেম্বরে অন্য ১২ জনের সঙ্গে পাবর্ত্য চট্টগ্রামে আসেন। তারা সবাই সবধরণের অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বলে দাবি র‌্যাবের।