অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সঙ্গে আলোচনার কথা ভাবছে
প্রান্তডেস্ক:বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে আলোচনার টেবিলে আনার উদ্যোগ নিতে পারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনে পশ্চিমাদের চাপ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটসহ নানা ইস্যু সামলাতে আওয়ামী লীগ সরকার আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চায়। এ লক্ষ্যে সামনের দিনগুলোতে সরকারের পক্ষে নানা চেষ্টা দেখা যেতে পারে। ক্ষমতাসীন সরকারের একাধিক সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে র্যাব এবং এর ৭ কর্মকর্তার ওপর ২০২১ সালে নিষেধাজ্ঞা দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এরপর গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না জানানো, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে পশ্চিমা অর্থায়নে ক্রমবর্ধমান নির্ভরশীলতা, আইএমএফের কাছ থেকে নেওয়া ঋণে পশ্চিমা প্রভাব, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় একক রপ্তানি পোশাক ক্রেতা ও শীর্ষ রেমিট্যান্স প্রেরণকারী দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ, রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি, রোহিঙ্গা ইস্যু- এ রকম নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি আওয়ামী লীগ সরকার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে পশ্চিমা বিশ্বের চাপে রয়েছে।
আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ে নড়েচড়ে বসেছে সব রাজনৈতিক দল। পশ্চিমা বিশ্বও বেশ তৎপর। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো বেশ আঁটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছে। মাঠ দখলে পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথে শান্তি সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। তবে এর মধ্যেও নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার জন্য বিরোধী দলের সঙ্গে নেপথ্যে আলোচনার বিষয়টি নিয়ে ভাবছে সরকার।
সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন হয় ২০১৮ সালে। এই নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিভিন্ন সময় নানা মন্তব্য করে আসছে। কয়েক মাস আগে ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের সাবেক রাষ্ট্রদূত সেই নির্বাচনের কথা তুলে ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এছাড়া গত কয়েক মাসে বিদেশি অন্যান্য কূটনীতিকরাও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন।
সপ্তাহখানেক আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাত সদস্যের কূটনীতিক প্রতিনিধি দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলটির কয়েকজন নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকের পর ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, তারা চায় বিএনপিসহ সব দল আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরেন তিনি।
বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতরা বলছেন, তারা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো সহিংসতা চান না। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরও আলোচনা চালিয়ে যাবেন।
এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, আওয়ামী লীগ এমন একটি নির্বাচন চায় যেখানে সব রাজনৈতিক দল অংশ নেবে। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সংলাপ অপরিহার্য। সংলাপ হলে দুই পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। আওয়ামী লীগ যদি সংলাপ শুরু করে তাহলে বিএনপিকেও এগিয়ে আসতে হবে।
খালেদা জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন কি না- এ নিয়ে সম্প্রতি ক্ষমতাসীন দলের নেতারা নানা বক্তব্য দিচ্ছেন। খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম মাস দুয়েক আগে প্রথম বক্তব্য দেন। ২৬ জানুয়ারি সংসদে তিনি বলেন করেন, ‘খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন না- এমন মুচলেকা দিয়েছেন।’ এর জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, ‘এ দাবি সত্য নয়।’ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজা স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে ২০২০ সালের ১৯ এপ্রিল ‘মুক্তি’ দেয় সরকার। ওই সময় যে দুটি শর্তে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। শর্তগুলো হলো- খালেদা জিয়া বিদেশে যেতে পারবেন না, দেশে থেকে বাসায় চিকিৎসা নেবেন। এর পর থেকে খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় মাস পরপর তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য দেন। গত রোববার ঢাকায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, অসুস্থতার গ্রাউন্ডে দুটি শর্তে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হয়েছে। তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না বা রাজনীতি করা থেকে বন্ধ থাকতে হবে—এ রকম শর্ত খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে করা আবেদনের মধ্যে ছিল না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি পাওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে চাইলে তাকে দেওয়া শর্ত মেনে চলতে হবে।
তাদের এসব বক্তব্য নিয়ে সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে খালেদা জিয়ার রাজনীতি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দুই মন্ত্রীর বক্তব্যের জবাব না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন দলের নীতিনির্ধারকরা। দলের নেতারা বলছেন- তারা এ নিয়ে কোনো পাল্টা জবাব দেবেন না।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মনে করছেন, বিদেশি কূটনীতিকদের ঘন ঘন সফরে সরকার এক ধরনের চাপে রয়েছে। তারা সরকারি দলের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছেন।