পাইলস প্রতিরোধে আপনি যা করবেন
ডা.ইসমাইল আজহারি::ইদানিং অসংখ্য মানুষ পাইলস রোগে ভুগছেন। কিন্তু কেন এই রোগ? আসুন জেনে নিই পাইলস কেন হয়, কীভাবেই বা এ রোগ প্রতিরোধ করবেন এবং এ রোগের চিকিৎসা কী।
মানুষের মলদ্বারের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি। এই ২-৩ ইঞ্চির ওপরের অংশের নাম রেক্টাম। রেক্টামের নিচের অংশ তথা মলদ্বারের আশপাশে কিছু রক্তনালি থাকে। এসব একসঙ্গে বলে রেক্টাল ভেইন। এই রেক্টাল ভেইন যদি কোনো কারণে ফুলে যায় বা কোনো কারণে এখানে যদি প্রদাহ হয়, তাহলে মলত্যাগের সময় তা থেকে রক্তপাত হতে পারে। এ অবস্থার নামই পাইলস বা হেমোরয়েড।
আরেকটি হলো ইন্টারনাল হেমরয়েড। ইন্টারনাল শব্দের অর্থ হচ্ছে অভ্যন্তরীণ। ইন্টারনাল হেমোরয়েডের ক্ষেত্রে মলদ্বারের অভ্যন্তরীণ রক্তনালিতে প্রদাহ হয়ে তা ফুলে যায়। পায়খানার সঙ্গে তাজা রক্ত যায়। আবার অনেকের পায়খানা স্বাভাবিক থাকলেও টয়লেট পেপারে রক্ত দেখা যায়। পায়খানার সময় ব্যথা হয়। মলদ্বার দিয়ে মাংস পিণ্ডের মতো কিছু একটা বেরিয়ে আসে, মলদ্বারে চুলকানি থাকে ইত্যাদি।
রোগের জটিলতা বিবেচনায় ইন্টার্নাল হেমরয়েডের চারটি স্তর রয়েছে। যেমন- প্রথম ডিগ্রি হেমরয়েডের ক্ষেত্রে পায়খানার সঙ্গে শুধু রক্ত যাবে, মলদ্বার দিয়ে কোনো মাংসের টুকরো বেরিয়ে আসবে না। দ্বিতীয় ডিগ্রি হেমোরয়েডের ক্ষেত্রে পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়ার পাশাপাশি পায়খানার সময় মলদ্বার দিয়ে একটি মাংসপিণ্ড বেরিয়ে আসবে এবং পায়খানা শেষ হওয়ার পর এ মাংসপিণ্ড নিজে নিজে ভেতরে ঢুকে যাবে কোনো ধরনের বাহ্যিক বল প্রয়োগ ছাড়াই। তৃতীয় ডিগ্রি হেমরয়েডের ক্ষেত্রে পায়খানার সময় রক্ত যাওয়ার পাশাপাশি মলদ্বার দিয়ে একটি মাংসপিণ্ড বেরিয়ে আসবে এবং এই মাংসপিণ্ড বাহ্যিক কোনো বল প্রয়োগ করা ছাড়া ভেতরে ঢুকবে না। হাতের আঙুল দিয়ে এটি ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া যাবে। চতুর্থ ডিগ্রি হেমরয়েডের ক্ষেত্রে স্থায়ীভাবে পায়খানার রাস্তা দিয়ে একটি মাংসপিণ্ড বেরিয়ে আসবে এবং তা হাতের আঙুল দিয়েও ভেতরে ঢুকানো সম্ভব হবে না।
পাইলস যে কারণে হয়
যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা রয়েছে বা অনিয়মিত পায়খানা হয় অথবা যাদের ডায়রিয়া হয়, তাদের ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্যতার কারণে অথবা ডায়রিয়ার কারণে রেক্টাল ভেইনগুলোয় অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং তাতে ইরিটেট হয়ে বসে প্রদাহ হয়। পরবর্তীকালে পাইলস হয়। অন্তঃসত্ত্বা নারীরও পাইলস হতে পারে ওবেসিটি তথা অতিরিক্ত শারীরিক ওজন হলে। যাদের দীর্ঘদিনের কাশি রয়েছে, তাদেরও পাইলস হতে পারে।
পাইলসের উপসর্গ
১. পায়খানার সময় রক্ত যায়
২. পায়ুপথের আশপাশে চুলকানি হয়
৩. পায়খানার সময় ব্যথা হতে পারে
৪. মলদ্বার দিয়ে মাংসপিণ্ড বেরিয়ে আসতে পারে
৫. অনিয়মিত পায়খানা হতে পারে
পরীক্ষা–নিরীক্ষা
অনেক সময় রোগীর কথাবার্তা শুনে পাইলস রোগ নির্ণয় করা যায়। তবে শিশুর ক্ষেত্রে নির্ণয়ের জন্য আরও কিছু পরীক্ষা-নীরিক্ষার প্রয়োজন পড়ে। যেমন- ডিজিটাল রেক্টাল এক্সামিনেশন। এখানে একজন ডাক্তার আঙুল দিয়ে পরীক্ষা করে দেখবেন। প্রোক্টোস্কপির ক্ষেত্রে ডাক্তার একটা ইনেস্টুমেন্ট দিয়ে মলদ্বারের ভেতরের অংশ ও রেক্টাম দেখবেন। কলোনস্কোপি করা যেতে পারে। সিগময়ডোস্কোপিও করা যেতে পারে।
পাইলস প্রতিরোধে করণীয়
এক গবেষণায় দেখা গেছে, মোটামুটি ৭০ শতাংশ পাইলসের জন্য দায়ী হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্যতা। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে দূরে থাকলে পাইলস থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে। আর কোষ্ঠকাঠিন্যতার মূল কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত গরুর মাংস খাওয়, তেলে ভাজা খাবার খাওয়া। যারা আঁশজাতীয় খাবার, যথা- ফলমূল, শাকসবজি কম খান, তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হয় এবং তা থেকে একসময় পাইলস দেখা দেয়। তাই পাইলস প্রতিরোধে যা করবেন তা হলো নিয়মিত শাকসবজি খাবেন। দৈনিক ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করবেন। গরুর মাংস কম খাবেন। তেলে ভাজা কিংবা চর্বিজাতীয় খাবার কম খাবেন।
পাইলসের চিকিৎসা
যাদের পাইলস প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে অর্থাৎ পায়খানার সময় যাদের হালকা ব্যথা হয় কিংবা রক্ত যায়, মলদ্বারের আশপাশে চুলকানি আছে, তারা নিচের নিয়মগুলো মেনে চললে উপকার পাবেন।
১. প্রতিদিন ৪ চামচ ইসুপগুলের ভুসি দিয়ে দৈনিক ২ বেলায় শরবত করে খাবেন (২ মাস)।
২. প্রতিদিন ২-৩ টা আপেল খাবেন (১ মাস)।
৩. ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করবেন প্রতিদিন
৪. তেলে ভাজা খাবার ও গরুর মাংস খাওয়া ছেড়ে দেবেন।
৫. যেসব খাবার খেলে শক্ত পায়খানা হয়, তা পরিহার করে চলবেন।
৬. কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা ডায়েরিয়া থাকলে দ্রুত রোগগুলোর চিকিৎসা করবেন।
যদি পাইলসের সমস্যা বেশি হয়, তখন একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করাবেন। সেই ক্ষেত্রে কিছু ক্রিম/অয়েন্টমেন্ট কিংবা খাবার ওষুধ খাওয়ারর প্রয়োজন হতে পারে।
ডা. ইসমাইল আজহারি: ফ্যামিলি মেডিসিন ফিজিসিয়ান, র্যামফিট কনসাল্টেশন এন্ড সাইক সেন্টার, মগবাজার, ঢাকা
ismailazhari49@gmail.com
+8801640808549