পাপিয়া দম্পতির ব্ল্যাকমেইল নিয়ে মুখ খুলছেন ব্যবসায়ীরা
প্রান্তডেস্ক:নরসিংদী যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ ও তার স্বামীর প্রতারণার শিকার ব্যবসায়ী ও ‘অনৈতিক কাজে’ বাধ্য হওয়া কয়েকজন তরুণীর খোঁজ মিলেছে বলে জানিয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, এরই মধ্যে প্রতারণার শিকার একাধিক ব্যক্তি ওই দম্পতির বিরুদ্ধে মৌখিক অভিযোগ করেছেন। এছাড়া পাপিয়া দম্পতিকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে বেশ কয়েকটির সত্যতা পাওয়া গেছে। তদন্তে প্রতিদিনই নতুন নতুন তথ্য বেরিয়ে আসছে।জাল টাকা বহন ও টাকা পাচারের অভিযোগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে পাপিয়াসহ (২৮) চারজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। বাকিরা হলেন পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন (৩৮), সাব্বির খন্দকার (২৯) ও শেখ তায়্যিবা (২২)। পরে রাজধানীর ফার্মগেটের ইন্দিরা রোড ও নরসিংদীতে বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়িসহ তাদের নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থের খবর পেয়ে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব। অভিযানে ইন্দিরা রোডে পাপিয়ার বাসা থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, ৫ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি চেক, বেশকিছু বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়। পরদিন বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি ও ২৪ ফেব্রুয়ারি শেরেবাংলা নগর থানায় অস্ত্র আইনে একটি ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরেকটি মামলা করা হয়।
বিমানবন্দর থানার ওসি বিএম ফরমান আলী বলেন, ‘তপন তালুকদার টুকু নামে এক ব্যবসায়ী পাপিয়া দম্পতির বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে এসেছিলেন। ওই ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, পাঁচ মাস আগে নরসিংদীতে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে পরিচয়ের সূত্র ধরে পাপিয়ার বাসায় গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে চারজন সুন্দরী তরুণীর সঙ্গে তার অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে পাপিয়া। তার স্বামী মফিজুরও সেখানে ছিল। পাপিয়া ও তার স্বামী আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন, ১০ লাখ টাকা না দিলে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করে দেবে। তাৎক্ষণিক ২০ হাজার টাকা দেওয়ার পরও তাদের মন গলেনি। আমাকে বাড়ির ছাদে তিন দিন আটকে রাখে। পরে আরও ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেওয়ার পর আমি ছাড়া পাই।’
তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, পাপিয়ার পরিচিত নরসিংদীর এক ব্যবসায়ী রাজধানীর একটি অভিজাত এলাকায় সপরিবারে বসবাস করেন। তিনিও আমন্ত্রণ পেয়ে গিয়েছিলেন পাপিয়ার বাগদি এলাকার বাসায়। ওই ব্যবসায়ীকে উদ্ধৃত করে তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ড্রইংরুমে বসে গল্প করার কিছু সময় পর পাপিয়া অন্য রুমে চলে যান। এরপরই সেখানে আসে দুই সুন্দরী তরুণী। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে তাকে জোরপূর্বক জড়িয়ে ধরেন। জোর করেও তিনি তাদের সরাতে পারছিলেন না। তবে খানিক পর বিদ্যুৎ চলে এলে তিনি দেখেন এক ব্যক্তি তাদের ছবি ওঠাচ্ছে। এরপর পাপিয়া ও তার স্বামী আবারও সেখানে আসেন। অনলাইনে ভিডিটিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে হাতিয়ে নেন ৫ লাখ টাকা। পরে বিভিন্ন সময় তাকে জিম্মি করে হাতিয়ে নেয় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা। ডিবির তদন্তকারী এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পাপিয়ার শিকার এমন অনেকের বিষয়েই আমরা জানতে পেরেছি। আমরা পর্যায়ক্রমে তাদের সঙ্গে কথা বলব। আসলেই কি তারা ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েছেন, নাকি স্বেচ্ছায় পাপিয়ার আস্তানায় গিয়েছিলেন।’