ইরানে জুমার নামাজ বাতিলের অনুরোধ
প্রান্তডেস্ক:করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে সব মহাদেশে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনো এ ভাইরাসজনিত রোগ কভিড-১৯কে ‘মহামারী’ ঘোষণা না করলেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে বিশ্বে।গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান ও সৌদি আরব ঐতিহাসিক দুই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। আজকের জুমার নামাজ বাতিলের জন্য ইরানের কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সৌদি আরব বিদেশিদের জন্য সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে ওমরা হজ।আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, গত বুধবার রাত পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৮২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবে গত দুই মাসে অন্তত ২ হাজার ৮০০ মানুষের প্রাণ গেছে। এদের মধ্যে ২ হাজার ৭৪৪ জন মারা গেছে চীনের মূল ভূখণ্ডে। দিন যতই যাচ্ছে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব ক্রমেই একটি বৈশ্বিক মহামারীর রূপ নিচ্ছে। প্রথমবারের মতো এক দিনে চীনের বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা চীনের ভেতরে আক্রান্তের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে বলে গত বুধবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার প্রাদুর্ভাব মোকাবিলার প্রস্তুতি আরও জোরদার করেছে।গত বুধবার চীনে নতুন করে ৪৩৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে গতকাল জানিয়েছে দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন। এদিন আক্রান্তে সংখ্যা আগের দিনের ৪০৬ জনের তুলনায় একটু বেড়েছে। এতে চীনের মূল ভূখণ্ডে করোনাভাইরাস আক্রান্তের মোট সংখ্যা ৭৮ হাজার ৪৯৭ জনে দাঁড়িয়েছে বলে দেশটির স্বাস্থ্য কর্র্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এদিন দেশটিতে আরও ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটি ২৮ জানুয়ারির পর চীনে করোনাভাইরাসে এক দিনে সবচেয়ে কম মৃত্যুর সংখ্যা। এর আগের দিন দেশটিতে ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছিল।করোনাভাইরাস সংক্রমণের উৎস হুবেই প্রদেশে বুধবার নতুন করে ৪০৯ জন আক্রান্ত হয়েছে এবং ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর বাইরে চীনে অপর তিনজনের মৃত্যু হয়েছে রাজধানী পেইচিং এবং হেইলংজিয়াং ও হেনান প্রদেশে। হুবেইয়ের বাইরে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ২৪ জন।এ ভাইরাসটি এখন চীনের বাইরে প্রায় ৫০টি দেশে ছড়িয়েছে এবং এসব দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৫০০ জনে দাঁড়িয়েছে। চীনের বাইরে মৃতের সংখ্যা ৫৮-তে পৌঁছে গেছে বলে জানিয়েছে সিএনএন।চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা এখন দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটিতে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৭৬৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন ও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার এক দিনে নতুন আক্রান্তের সংখ্যায় দেশটি চীনকে ছাড়িয়ে যায়। এদিন এখানে ৫০৫ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়।এশিয়ার বাইরে সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে ইতালিতে। বুধবার পর্যন্ত দেশটিতে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ছিল অন্তত ৪০০। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাসহ ইতালি এক লাখ লোককে কোয়ারেন্টিন করেছে বলে জানা গেছে। দেশটিতে ভাইরাস আক্রান্ত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে।ইরানে তুলনামূলক কম লোক আক্রান্ত হলেও চীনের পর এ দেশটিতেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত ২৪৫ জন ছিল এবং মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের।এদিকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় আজকের জুমার নামাজ বাতিলের জন্য ইরানের কর্তৃপক্ষের কাছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুরোধ করেছে বলে জানিয়েছে তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদুলু। এছাড়া বেশি লোক সমাগম হয় এমন সব ধরনের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপত্র কিয়ানউশ জাহানপুরকে উদ্ধৃত করে ইরনা নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় আগামী সপ্তাহেই ১৫টি ল্যাব চালু করা হচ্ছে।এর পাশাপাশি জাপানে আট, হংকং ও ফ্রান্সে দুজন করে এবং তাইওয়ানে এক ও ফিলিপাইনে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার নতুন দেশ হিসেবে ব্রাজিল, পাকিস্তান, নরওয়ে, গ্রিস, রোমানিয়া, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, জর্জিয়া, নর্থ মেসেডোনিয়া ও আলজেরিয়ায় ভাইরাসটি ছড়িয়েছে।এদিকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ করতে সতর্কতা হিসেবে বিদেশিদের জন্য ওমরা করার সুবিধা স্থগিত করেছে সৌদি আরব। এছাড়া পর্যটন ভিসা থাকা সত্ত্বেও করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে এমন এলাকা থেকে আসা বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের সৌদি আরবে প্রবেশ না করতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির কর্র্তৃপক্ষ। তবে এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট করে দেশগুলোর নাম উল্লেখ করা হয়নি। মক্কায় ওমরা বন্ধ করার পাশাপাশি পবিত্র নগরী মদিনায়ও প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছে। ( সৌজন্যে:দেশরূপান্তর)