এশিয়ার বাইরে প্রথম মৃত্যু ফ্রান্সে
প্রান্তডেস্ক: করোনাভাইরাসজনিত রোগে (কভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে এশিয়ার বাইরে প্রথম কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার ফ্রান্সে মারা যান ৮০ বছর বয়সী এক চীনা নাগরিক। বিবিসি বলছে, ওই ব্যক্তি হুবেই প্রদেশ থেকে গত মাসে ফ্রান্সে গিয়েছিলেন। গতকাল আফ্রিকার দেশ মিসরেও প্রথমবারের মতো শনাক্ত হয়েছে কভিড-১৯ রোগী। এদিকে শুক্রবার আরও ১৪৩ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে চীনে এই রোগে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫২৪ জনে। এর আগে চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে কেবল তিনটি দেশ হংকং, ফিলিপাইন ও জাপানে নতুন করোনাভাইরাসে তিনজনের মৃত্যু হয়।
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির মূল ভূখণ্ডে শুক্রবার আরও ২ হাজার ৬৪১ জনের শরীরে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। সব মিলিয়ে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৬ হাজার ৫৮০ জনে। আর অন্তত ২৬টি দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে আক্রান্ত হয়েছে আরও ৫১০ জন। সব মিলিয়ে বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আর এই সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৮ হাজার ৪১৩ জন।
গতকাল বিবিসির খবরে ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অ্যাগনেস বুজিনের বরাতে বলা হয়েছে, চীনের হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা ৮০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি ১৬ জানুয়ারি ফ্রান্সে আসেন। ২৫ জানুয়ারি তাকে প্যারিসের হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়।
জানুয়ারির শেষের দিকে ১১ জনেক শনাক্ত করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম ইউরোপীয় দেশ হয়ে ওঠে ফান্স। এদের মধ্যে ছয়জন এখনো হাসপাতালে রয়েছেন। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মারা যাওয়া চীনা গুরুতর অবস্থায় উত্তর প্যারিসের বিসাত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। করোনাভাইরাসের কারণে ফুসফুসের সংক্রমণে তার মৃত্যু হয়। এই লোকের মেয়েও সংক্রমিত, তবে তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন। ফ্রান্সে সংক্রমিত বাকি পাঁচজনই ব্রিটিশ নাগরিক, যারা একটি রিসোর্টের একটি শ্যালেতে গিয়ে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়।
আক্রান্ত রোগীর ১ শতাংশেরও কম মানুষ যে চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরের, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে ওয়াং ই বলেন, শুরু থেকেই আমরা এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলে অত্যন্ত খোলামেলা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে তথ্য সরবরাহ করে আসছি।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে সর্বপ্রথম উহানের চক্ষু বিশেষজ্ঞ লি ওয়েনল্যাং সতর্ক করেছিলেন। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর এক বার্তায় তার সহকর্মীদের বলেছিলেন, নতুন এ করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্ক হওয়া জরুরি। আর সেজন্য চীনা কর্র্তৃপক্ষ তার মুখ বন্ধ করে দিয়েছিল মুচলেকা আদায় করে। ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই ওই চীনা চিকিৎসকের মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পরপরই কড়া সমালোচনার শুরু হয় চীনকে নিয়ে।
এ প্রেক্ষিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় নিয়ে হুবেই ও অন্যান্য প্রদেশের কয়েকশ উচ্চপদস্থ ব্যক্তিকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে চীন। অনেককে সতর্ক করা হয়েছে এবং কারও কারও বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে চীনা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।
গত ডিসেম্বরের শেষ দিন চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে নতুন ধরনের এ করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে। এ পর্যন্ত মৃত্যু ও আক্রান্তের বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটেছে ওই হুবেই প্রদেশে।