পিঁপড়ার ডিমে চলে ছয়জনের সংসার
বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেল ৫টার দিকে বোয়ালমারী উপজেলার চতুল ইউনিয়নের বাইখির চৌরাস্তা থেকে বাসে উঠতে দেখা যায় বাশার শেখকে। বাশার শেখের বয়স ৪২ বছর। তার বাড়ি বোয়ালমারী উপজেলার জয়নগর গ্রামে। হাতে কাপড়ে মোড়ানো বড় বাঁশেরডালা। ডালার ভেতরে কী আছে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বলেন, প্রতিদিন সকাল হলেই বেরিয়ে পড়ি। সারাদিন সংগ্রহ করি লাল পিঁপড়ার ডিম। এই ডিম বিক্রি করেই চলে সংসার।
বাশার শেখ জানান, সাধারণত মেহগনি, আম, লিচুসহ দেশীয় গাছগুলোতেই লাল পিঁপড়ার বাসা পাওয়া যায়। লালা ব্যবহার করে গাছের ডালের আগার দিকের চার-পাঁচটা পাতা জোড়া দিয়ে শক্ত বাসা তৈরি করে পিঁপড়ার দল। পরে সেখানে তারা ডিম পারে। বড় বাসা থেকে ১শ থেকে দেড়শ গ্রাম ডিম পাওয়া যায়। আশ্বিন-কার্তিক মাসের দিকে এই ডিমের চাহিদা থাকে বেশি। তবে সব থেকে বেশি ডিম পাওয়া যায় শীতের শেষের দিকে ফাল্গুন মাসে। কিন্তু সেই সময় ডিমের চাহিদা তেমন একটা থাকে না। এই ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজটি খুব সতর্কতার সাথে করতে হয়। এটি মাছের খাবার হিসেবে বিক্রি হয়। ডিম আস্ত না রাখলে মাছ তা খায় না।
তিনি আরও জানান, লালচে বা লাল পিঁপড়ার ডিম প্রতি কেজি ৮শ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়ে থাকে। সাধারণত সৌখিন মাছ শিকারিরা তার কাছ থেকে এই ডিম ক্রয় করে থাকেন। পিঁপড়ার ডিম মাছেদের খুব প্রিয় খাবার। বরশিতে আটা-ময়দা-পাউরুটি আর আধারের সঙ্গে লালচে বা লাল পিঁপড়ের ডিম দেওয়া হলে বড় মাছ সহজে টোপ গেলে। এজন্য যারা সৌখিন মাছ শিকারি বা টিকিট কিনে হুইল বরশি দিয়ে মাছ শিকার করে তাদের কাছে পছন্দের টোপ হলো পিঁপড়ের ডিম।
পানির নির্দিষ্ট স্থানে আধার ফেলে মাছ ডেকে আনার জন্য এই ডিমের চাহিদা রয়েছে জেলেদের কাছেও। এজন্য অনেক সময় জেলেরা তাদের কাছ থেকে ডিম কিনে থাকেন বলে জানান বাশার শেখ।কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি গরিব মানুষ। এই কাজে কোনো পুঁজি লাগে না। এজন্য এটাকে জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছি। সারাদিনে তিনি এক থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করতে পারেন। আর তাতেই চলে বাবা-মা-স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে ৬ জনের সংসার।(দৈনিক দেশ রূপান্তরের সৌজন্যে)