মালিক-শ্রমিকের কাছে মজুরি প্রস্তাব চেয়েছে বোর্ড

প্রান্তডেস্ক:মজুরি বোর্ডের প্রথম সভায়ই বোর্ড চেয়ারম্যান মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষের কাছেই মজুরি প্রস্তাবনা চেয়েছেন। মালিকপক্ষ ন্যূনতম মজুরি কত প্রস্তাব করে এবং শ্রমিকপক্ষ কত প্রস্তাব করে, সেটি বোর্ডের পরবর্তী বৈঠকেই উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে।
গতকাল বুধবার নতুন মজুরি বোর্ডের প্রথম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। দেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের মজুরি সমন্বয়ের জন্য গঠিত মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সিনিয়র জেলা জজ লিয়াকত আলী মোল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বোর্ডের ছয় সদস্যের সবাই উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান গনমাধ্যম কে বলেন, ‘বৈঠকে তৈরি পোশাক খাতের বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। বর্তমানে কতটা গার্মেন্ট কারখানা চালু রয়েছে, কতজন শ্রমিক কাজ করেন সে বিষয়ে জানতে জান বোর্ড চেয়ারম্যান। মালিকপক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে আমার কাছে মজুরি কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়ে জানতে চওয়া হয়। আমি বলেছি, মালিক-শ্রমিক সবার জন্য সহনীয় হয় এমন মজুরি কাঠামো ঠিক করা দরকার।আমাদের মনে রাখতে হবে, সবার আগে দেশ। এরপর শিল্প, তারপর মালিক-শ্রমিক। সুতরাং শিল্পের সক্ষমতা, চলমান বৈশ্বিক অস্থিরতা এবং সবার স্বার্থ দেখে তবেই মজুরি কাঠামো ঠিক করা উচিত।’
সিদ্দিকুররহমান আরো বলেন, ‘বৈঠকের শেষ দিকে মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষের কাছে মজুরি প্রস্তাবনা চান এবং পরবর্তী বৈঠকে এই প্রস্তাব উভয় পক্ষকেই বোর্ডে উপস্থাপন করতে বলেন।আমরা এখন বিজিএমইএ ও সব সদস্যের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে বোর্ডে উপস্থাপন করব।’
সভায় শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে পোশাকশিল্পে বড়-ছোট ও মাঝারি গার্মেন্ট কারখানায় সব মিলে ৪০ লাখের মতো শ্রমিক রয়েছেন। এর বাইরে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের ১০ লাখসহ সব মিলে ৫০ লাখের মতো শ্রমিক কাজ করছেন। এসব শ্রমিক তাঁদের পরিবারের সদস্য মিলে প্রায় পাঁচ কোটি লোক এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল।
এরই মধ্যে অনেক শ্রমিক সংগঠন ন্যূনতম মজুরি ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা দাবি করেছে। এ প্রসঙ্গে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। এরপর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে জমা দেব। বাস্তবভিত্তিক প্রস্তাব দিতে হবে। আমরা আলোচনা সাপেক্ষে বাস্তবভিত্তিক প্রস্তাব দেব। শ্রমিকরা যাতে না ঠকে, সে বিষয়টিকে আমি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেব।’
তিনি আরো বলেন, ‘আগামী বৈঠকেই প্রস্তাব উপস্থাপন করতে পারব বলে আশা করছি। এরপর অক্টোবর মাসের মধ্যে মজুরি কাঠামো চূড়ান্ত করে ফেলব এবং ডিসেম্বর নাগাদ চূড়ান্ত ঘোষণা ও গেজেট প্রকাশ করা সম্ভব হবে।’
গত মাসের প্রথম সপ্তাহে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর জন্য নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করে। মোট ছয় সদস্যের বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজন স্থায়ী সদস্য। অন্য দুজন মালিক-শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি।
গার্মেন্ট শ্রমিকদের জন্য ১৯৯৪ সালে প্রথম মজুর বোর্ড গঠন করে সরকার। এর আগ পর্যন্ত অবশ্য ১৯৮৪ সালে ৬৩০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করার কথা বলা হলেও মজুরি বোর্ডে এর সঠিক কোনো তথ্য নেই। তবে ১৯৯৪ সালে ৯৩০ টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়। ১২ বছর পর ২০০৬ সালে গঠিত মজুরি বোর্ড ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে এক হাজার ৬৬২ টাকা ৫০ পয়সা। চার বছর পর ২০১০ সালের গঠিত মজুরি বোর্ড নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ করে তিন হাজার টাকা। ২০১৩ সালে সাভারের ভয়াবহ রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বিশ্বব্যাপী পোশাক খাত নিয়ে ব্যাপক নেতিবাচক সমালোচনা হওয়ায় তিন বছরের মাথায় ফের মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়। এবার নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ করা হয় পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা। সব শেষ ২০১৮ সালে গঠিত মজুরি বোর্ড আট হাজার টাকা নির্ধারণ করে। এরপর পার হয়ে গেছে পাঁচ বছর। শ্রম আইনেও বলা আছে পাঁচ বছর পর পর মজুরি সমন্বয় করতে হবে। তার আলোকেই নতুন বোর্ড গঠন করা হয়েছে।