বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি ক্যাপসের
প্রান্তডেস্ক:বায়দূষণ কমাতে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। সোমবার (২২ মে) শাহবাগে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এসব দাবি জানান সংগঠনের নেতারা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বায়ুদূষণ বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মূল কারণ হলো, মানুষের স্বাস্থ্যে ওপর বায়ুদূষণের বিরূপ প্রতিক্রিয়া। প্রতিনিয়ত বায়ু দূষিত হচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে স্বাস্থ্যের ওপর। তাই এ মুহূর্তে যদি দূষণ রোধে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নেওয়া না হয়, বর্তমান ও পরবর্তী প্রজন্মকে বায়ুদূষণের কারণে অনেক বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
বায়ুদূষণ রোধে ক্যাপসের দাবিগুলো হলো-
১. ভবিষ্যতে বায়ু দূষণের মারাত্মক প্রভাব হ্রাস করার জন্য, কমপক্ষে পূর্ববর্তী মান প্রতি ঘনমিটারে ১৫ মাইক্রোগ্রাম বজায় রাখা।
২. বায়ু দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০২২ এ নির্গমন মানমাত্রাগুলোকে আরও শক্তিশালী করা এবং আগত TEPMP তে স্টাক ইমিশনের মানমাত্রাগুলোকে পুনঃবিবেচনা এবং অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৪. সব ধরনের বিদ্যুৎ প্লান্টকে (লাল, কমলা শ্রেণি) Real Time Monitoring প্রযুক্তি ব্যবহার করে দূষণ নির্গমনের মাত্রা পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখলে দূষণের নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। পাইরোলাইসিস প্লান্ট ও চারকোল প্রস্তুত শিল্পকে লাল শ্রেণিভুক্ত করা উচিত। সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য EIA, EMP আবশ্যিক করা উচিত এবং শিল্পের আকার দিয়ে নয় শিল্পের ধরণ অনুযায়ী প্রতিটি শিল্প কারখানার জন্য স্বচ্ছ EIA, EMP ব্যবস্থা থাকা উচিত। ধরনভেদে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব আইন, বিধিমালা, নীতিমালা ইত্যাদি অনুযায়ী চলে। তাই পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে সেই আইন, বিধিমালা, নীতিমালা গুলোকে যুগপোযোগী করে। নতুন করে প্রণয়ন করতে হবে যেখানে পূর্বের আইন বিধিমালার সামঞ্জস্য বজায় থাকবে।
স্বল্পমেয়াদী সুপারিশ
১. অবৈধ ইটভাটা গুলো বন্ধ করে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আগুনে পোড়ানো ইটের বিকল্প হিসেবে সিমেন্টের তৈরি ব্লকের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়াতে হবে।
২. ব্যক্তিগত এবং ফিটনেস বিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রয়োজনে নম্বর প্লেট অনুযায়ী জোড়-বিজোড় পদ্ধতিতে গাড়ি চলাচলের প্রচলন করা যেতে পারে।
৪. মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী শুষ্ক মৌসুমে সিটি কর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে দূষিত শহর গুলোতে প্রতি দিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর পর পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. রাস্তায় ধুলা সংগ্রহের জন্য সাকশন ট্রাকের ব্যবহার করা যেতে পারে।
মধ্যমেয়াদী সুপারিশ
৬. সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রচুর পরিমাণ গাছ লাগাতে হবে এবং ছাদ বাগান করার জন্য সবাইকে উৎসাহিত করতে হবে।
৭. আলাদা সাইকেল লেনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৮. দূষিত শহর গুলোর আশেপাশে জলাধার সংরক্ষণ করতে হবে।
৯. সিটি গভার্নেলের প্রচলনের মাধ্যমে উন্নয়ন মূলক কার্যকলাপের সমন্বয় সাধন করতে হবে। সেবা সংস্থার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সমন্বয়ের মাধ্যমে হয় নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করতে হবে।
দীর্ঘমেয়াদী সুপারিশ
১০. নির্মল বা আইন-২০১১ যত সম্ভব প্রণয়ন করতে হবে।
১১. পরিবেশ সংরক্ষণ ও সতেনতা তৈরির জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। নিয়মিত বায়ু পর্যবেক্ষণ স্টেশনের (ক্যামন) ব্যাপ্তি বাড়িয়ে ঢাকা শহরের সব এলাকাকে এর আওতাধীন করতে হবে। এছাড়াও বায়ু দূষণের পূর্বাভাস দেওয়ার প্রচলন করতে হবে।
১২. গণপরিবহনসহ ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন করা।
১৩. সর্বোপরি সচেতনতা তৈরির জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে বায়ু দূষণ সম্পর্কে আরও বেশি তথ্যনির্ভর অনুষ্ঠান প্রচারের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে ঢাকাসহ সারা দেশের বায়ু দূষণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
১৪. পরিবেশ ক্যাডার সার্ভিস ও পরিবেশ পুলিশ চালু এবং পরিবেশ আদালত কার্যাবলী গতিশীল করতে হবে।