সিলেটে সিটিতে প্রার্থী হচ্ছেন বিএনপিপন্থী সব কাউন্সিলর

নির্বাচনে প্রার্থী হতে যাচ্ছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) বিএনপিপন্থী কাউন্সিলররা। দলের নিষেধাজ্ঞায় প্রথম দিকে অনেকটা দিশাহারা অবস্থায় থাকলেও এখন তাঁরা বলছেন, কাউন্সিলর পদে এলাকার মানুষ দল বিবেচনায় ভোট দেন না। নির্বাচনে প্রার্থী হতে এলাকার মানুষ চাপ দিচ্ছে। তাঁদের কথা রাখতে হবে। সিসিকের বিএনপিপন্থী ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা বলে নির্বাচন নিয়ে তাঁদের এই অবস্থানের কথা জানা গেছে।
তাঁদের কয়েকজনের যুক্তি, ‘নির্বাচনের এক মাস আগে দল থেকে এমন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া রীতিমতো অবিচার। শেষ মুহূর্তে এভাবে সরে দাঁড়ালে এলাকার মানুষের কাছে হেয়প্রতিপন্ন হতে হবে। যাঁরা এত দিন ভোট দিয়ে, ছায়া দিয়ে সহযোগিতা করেছেন, পাশে থেকেছেন, তাঁদের কোন মুখে সরে যাওয়ার কথা বলব। তাঁরা তো আমাদের বেঈমান ভাববেন।’
সিসিকের ওয়ার্ড কাউন্সিলর ৩৬ জন। এর মধ্যে ২৭ জন সাধারণ কাউন্সিলর এবং ৯ জন নারীদের জন্য সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। ২৭ জন কাউন্সিলরের মধ্যে সাতজন বিএনপিপন্থী ছিলেন। তাঁদের একজন দল থেকে পদত্যাগ করেছেন, আরেকজন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলরদের মধ্যে দুজন বিএনপির মহানগর নেত্রী। অন্য তিনজন বিএনপি ঘরানার হলেও দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয় নন।
১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিএনপি নেতা সৈয়দ তৌফিকুল হাদী টানা দুইবারের নির্বাচিত। তিনি বলেন, ‘দল থেকে মানা করা হয়েছে। এলাকায় একাধিক মতবিনিময়সভা করেছি। জনগণ মানছেন না। তাঁরা বলছেন, দলের মার্কা দেখে আমরা ভোট দিইনি। শেষ পর্যন্ত কী হয় দেখি। অপেক্ষায় আছি।’ তৌফিকুল হাদী অপেক্ষায় থাকার কথা বললেও তিনি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে তাঁর ঘনিষ্টজনরা জানিয়েছেন।
সিসিকের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ৪ নম্বর ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করছেন যথাক্রমে বিএনপি নেতা রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও ফরহাদ চৌধুরী শামীম। বিএনপির মহানগর কমিটির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এই দুই নেতাও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
টানা চারবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রতিনিধি হিসেবে যাঁরা দায়িত্ব পালন করছেন, তাঁদের সঙ্গে এলাকার মানুষের হৃদয়ের বন্ধন তৈরি হয়েছে। নির্বাচনের মাসখানেক আগে হঠাৎ দলের এমন সিদ্ধান্তে একজন কাউন্সিরের পক্ষে এলাকার ওই সব মানুষকে ত্যাগ করে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে আসা খুব হৃদয়বিদারক, কষ্টকর ও বিব্রতকর। এসব মানুষকে হঠাৎ এভাবে ফেলে রেখে নির্বাচনের মাঠ ত্যাগ করা গ্রহণযোগ্য হবে না। মানুষের কাছে বেঈমান হয়ে যেতে হবে।’
নির্বাচনে যাবেন কি না প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘খুবই বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি। এত মানুষকে এভাবে বিপদে ফেলে যাই কিভাবে। গতকালও আমার বাসায় এলাকার মুরব্বিরা জড়ো হয়েছিলেন। তাঁরা বলেছেন, ‘আমরা তোমাকে বিএনপি দেখে ভোট দিইনি। আসলে আমার নির্বাচন করা ছাড়া উপায় নেই।’
টানা চারবারের নির্বাচিত আরেক কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম নির্বাচনে অংশ নেবেন জানিয়ে বলেন, ‘আমরা দল নিয়ে কখনো ওয়ার্ডভিত্তিক নির্বাচন করিনি। দলের কথা বলে কোনো নির্বাচনে অংশ নিইনি। দল করি, কিন্তু দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে আমার ওয়ার্ডের জনগণ আমাকে নির্বাচিত করেছেন। দলে সমস্যা, এটা দল বুঝবে। এখন যদি জনগণকে বলি, দল বলেছে ওয়ার্ডে নির্বাচন না করতে তাহলে জনগণের কাছে হেয়প্রতিপন্ন হয়ে যাব। তাই নির্বাচনে অংশ নিতে হচ্ছে।’
১৪ নম্বর ওয়ার্ডের দুইবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুনিমও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘রমজানে মতবিনিময় করেছি। সব পাড়া-মহল্লার জনগণ এসেছিলেন। মুরব্বি, যুবক, মা-বোন যাঁরা এসেছিলেন, সবাই মত দিয়েছেন নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য।’
২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আব্দুর রকিব তুহিনও দুইবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর। তিনি বলেন, ‘আমি তো দল থেকে ঘোষণা দিয়ে পদত্যাগ করেছি আড়াই বছর আগে। সুতরাং এই নির্দেশনা আমার জন্য প্রযোজ্য নয়।’
সিসিকের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের টানা তিনবারের কাউন্সিলর এ বি এম জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমি দলের একবারে নিচের পর্যায়ের কর্মী। ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য। আমাকে রাখলে দলের যে খুব উপকার হবে এ রকমও নয়, আবার না রাখলেও দলের ক্ষতি হবে এমনও নয়। এলাকাবাসীর চাপের কারণে নির্বাচন থেকে পিছিয়ে যাওয়ার উপায় নেই।’
সংরক্ষিত ওয়ার্ডের তিনবারের নির্বাচিত নারী কাউন্সিলর রোকসানা বেগম শাহনাজ মহিলা দলের সভাপতি ছিলেন। তিনি এবার প্রার্থী হবেন সাধারণ ওয়ার্ড থেকে। রোকসানা বলেন, ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছি। সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর তিনবার হয়ে দেখেছি কাজ করা যায় না। তাই এবার ২৫ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডের প্রার্থী হচ্ছি।’ দলের নির্দেশনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বাকি সবাই অংশ নিলে আমিও নেব। দেখা যাক।(’দৈনিক কালের কন্ঠের সৌজন্যে)