কফি হাউজের নামে নারী নির্যাতন কেন্দ্র চালু::অভিযানে দুই ব্যক্তি গ্রেফতার
প্রান্তডেস্ক:কফি হাউজের নামে নারী নির্যাতন কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। সেখানে নারীদেরকে বিশ হাজার টাকায় চাকরী দেয়ার লোভ দেখিয়ে নিয়ে ভিতরে গোপন রুমে আটকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে। এমনকি নারীকে আটকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে অনৈতিক কাজে বাধ্য করা হয়। রাজধানীর অদূরে ময়মনসিংহের ভালুকা পূর্বপাড়া সার্কাস মাঠ সংলগ্ন কফি হাউজের ভিতরে ছোট ছোট রুম করে তরুনীদেরকে আটকে রেখে অনৈতিক কাজে বাধ্য করা হচ্ছে। প্রায় ভালুকার কফি হাউজ গুলোর গোপন রুমে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। কফি হাউজসহ ছাড়াও কিছু অভিজাত রেষ্টুরেণ্টে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে।
একটি জিডির সূত্র ধরে গত রোববার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ভালুকার নতুন কফি হাউজে ২-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) টিম অভিযান চালিয়ে কফি হাউজের মালিকসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে।
তাদের স্বীকারোক্তি মতে, গোপন রুম থেকে এক নারীকে উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার মুক্তাগাছা দুই এপিবিএনের অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) আলী আহমদ খান সংবাদকে অভিযান চালানো ও ভিকটিমকে উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।গ্রেফতারকৃতরা হলো,কফি হাউজের পরিচালনাকারি রিয়াদ মিয়া ও ভাড়াতে আকাশ মিয়া।
আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশ (এপিবিএন-২) থেকে বলা হয়েছে,অভিযুক্তরা ভালুকায় কফি হাউজের আড়ালে উঠতি মেয়েদেরকে বেশী বেতনের (২০ হাজার টাকায়) লোভ দোখিয়ে কফি হাউজে চাকরী দেয়। প্রথমে তাদের সঙ্গে ভাল আচরণ করা হলেও পরবর্তীতে তাদেরকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে তাদেরকে অনৈতিক কাজে বাধ্য করা হয়। কোন তরুনী রাজি না হলে তাদের উপর চালানো হয় নির্যাতন। নির্যাতনের ঘটনায় কাউকে বলার সুযোগ দেয়া হয় না। তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোনস হ অন্যান্য সামগ্রী নিজেদের হেফাজতে নিয়ে যায়। এরপর টর্চার সেলের মত করে তাদের উপর যৌন নির্যাতন চালানো হয়।
ভালুকায় একাধিক রেষ্টুরেণ্টের ভিতর আলাদা রুম ও টর্চার সেল বানিয়ে তাদেরকে দিয়ে চাকরীর নামে অপকর্ম করতে বাধ্য করা হত। এর আগেও ভালুকায় একাধিক রেষ্টুরেণ্টে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। অনেক নারীকে চাকরী ও মিথ্য্ াপ্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে। কফি হাউজে চাকরীর আড়ালে নানা ভাবে অনৈতিক কাজ চালানো হচ্ছে। সম্প্রতি ভালুকায় ফুড প্লেজ নামে একটি কফি হাউজে একই ধরনের ঘটনা ঘটছে। অবশেষে স্থানীীয় জনরোষে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করতেদ বাধ্য হয়েছে। ভালুকার কফি হাউজের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে ভালুকা মডেল থানায় মানব পাচার দমন ও প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে,শুধথু ভালুকাই নয় অনেক অভিজাত রেষ্টুরেষ্টের ভিতর আলাদা ছোট ছোট রুম বানিয়ে নানা অনৈতিক কাজ করা হচ্ছে। খোদ রাজধানীর খিলগাও ও বাসাবো এলাকার কিছুৃ কিছু রেষ্টুরেণ্টে এমন গোপন রুম রয়েছে। সেখানে বসলে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে।এর আগে সম্প্রতি এয়ারপোর্ট (১৩) আর্মড পুলিশের টিম পল্টন চায়না মার্কেটে লিফটের- ১২তে রিক্রুটিং এজেন্সি স্টার লাইন এসোসিয়েট অফিসে অভিযান চালিয়ে মানব পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত ফিরোজ মো. মানসুরুল হক ও মো. রাজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এয়ারপোর্ট (১৩) আর্মড পুলিশের কমান্ডিং অফিসার (অ্যাডিশনাল ডিআইজি) তোফায়েল আহম্মদ সংবাদকে জানান, অভিযুক্তরা অসৎ উদ্দেশ্যে ওই গৃহবধূকে সৌদি আরবে গৃহকর্মীর কাজ দিয়ে এক হাজার রিয়েল বেতনের কথা বলে পাঠিয়েছে। তারা জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর কোন প্রকার প্রশিক্ষণ ও ছাড়পত্র (স্মার্টকার্ড) ছাড়াই এয়ারপোর্ট কণ্ট্রাক করে গত ২ ফেব্রুয়ারি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে সৌদি আরবের দাম্মাম আরআর শহরে স্টারলাইন এসোসিয়েটে রিক্রুটিং এজেন্টের কাছে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে যাওয়ার পর সেখানকার গৃহকর্তা তার স্ত্রীকে প্রতি নিয়ত যৌন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করছেন। ঠিকমতো খাবার না দিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত কাজ করাচ্ছেন। যৌন নির্যাতন নিত্য দিনের ঘটনা। নির্যাতন সইতে না পেরে ওই গৃহবধূ গোপনে টেলিফোনে বিষয়টি তার স্বামীকে জানিয়েছেন। শিগগিরই তাকে উদ্ধার করতে না পাারলে সে আত্মহত্যা করবে বলে স্বামীকে জানিয়েছে।
সৌদি আরবে বর্বর নির্যাতনের কারণে ওই গৃহবধূ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে আহবান জানিয়েছেন।
স্ত্রীর কথা শোনার পর স্বামী ওই আদম বেপারীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে তার কথায় পাত্তাও দেয়নি। বারবার হাতে পায়ে ধরে অনুরোধ করে স্ত্রীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে বললে আরও ৪ লাখ টাকা দাবি করে। এরপর স্বামী সেলিম মিয়া উক্ত ঘটনা এয়ারপোর্ট (১৩) আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কাছে অভিযোগ করেন।
অপবশেষে এপিবিএনের সাইবার সেল ও গোয়েন্দা টিমের সহযোগিতায় সম্প্রতি পল্টন চায়না মার্কেটের উপরে ট্রাভেল এজেন্সিতে অভিযান চালিয়ে দুই প্রধান অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। তাদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, এইভাবে সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী ও ট্রাভেল এজেন্সির অসাধু কর্মকর্তারা পরস্পর যোগসাজশে দেশের দরিদ্র পরিবারের নারীদেরকে ফুসলিয়ে ও মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে দেশের বিভিন্ন রেষ্টুরেণ্টে ও মধ্যপ্রাচ্যে চাকরী দেয়ার কথা বলে পাঠায়। সেখানে তাদের ওপর চলে নানাভাবে নির্যাতন। অনেকেই দেশে ফিরে নির্যাতনের বর্বর কাহিনী তুলে ধরেন। এরপরও থামছে না মানব পাচার। থানা পুলিশ অনেক অভিযোগ পাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নিতে গড়িমসি করায় অবশেষে আর্মড পুলিশ ঝটিকা অভিযান চালিয়ে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
এই ভাবে মানব পাচারকারি চক্র পরস্পর যোগসাজশে নারীদেরকে বেশী বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে নির্যাতন করে। এই ধরনের ঘটনা প্রায় ঘটছে। অনেকেই অভাবের কারনে পাচারকারি চক্রের খপ্পরে পড়ে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।