আজ পাঁচ গাও গন হত্যা দিবস
প্রকাশিত হয়েছে : ৭ মে, ২০২৩ ১২:৫২ অপরাহ্ণ | সংবাদটি ১১৬ বার পঠিত

কাঠ পর্যন্ত রেহাই পায়নি পাকিস্তানিদের দোসরদের হাত থেকে। লোকজন হয়েছে জানোয়ার দের হাতে বন্দি।এর পরই পাক দস্যুরা ধ্বংসের এক মহাযজ্ঞে সমবেত হয়। সরকার বাজারের কাছেই এক দিঘির পাড়ে। বন্দিদের একজনের পায়ের সাথে আরেক জনের মাথা বেঁধে ফেলে দেয় দিঘির পানিতে। পাঠক বুঝতেই পারছেন একজনের পায়ের সাথে আরেক জনের মাথা বেধে দেয়ার অর্থ, যাতে কেউই আর পানি থেকে উঠতে না পারে, কি পৈশাচিকতা, কি নির্মমতা। এইভাবে পৃথিবীর আধুনিকতম বাহিনী( কথিত) সমস্ত মানবাতর প্রতি বুড়োআঙুল দেখিয় হত্যা করে ৫৯ জন আদম সন্তান কে। এর মাঝেও কৌশলে দুএকজন প্রাণে রক্ষা পান এরা হলেন “সাধু শব্দকর,চরিত্র শব্দকর, ও জিতেন্দ্র মালাকার”।
অপারেশন সফল করতে সর্বত্মক সহযোগিতা করার জন্য দালাল দের সাথে আরেকবার হাত মিলিয়ে বিদায় নেয় পাকিস্তানি দস্যুরা। যাবার সময পাক-হানাদারদের উপহার দেয়া হয় পাঁচগাওের ৪ বীর সন্তান কে যাদের যাবার রাস্তায় গুলি করে হত্যাকরে তাদের লাশ মনু নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। এই ৪ জন বীর সন্তান হলেন অমূল্য চরন দাশ( শিক্ষক রাজনগর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়) চন্দ্রনাথ ও উপেন্দ্র মালাকার। গনহত্যার পর পাক হানদাররা চলেগেলে গ্রামের লোকজন দিঘিতে জালফেলে হাত-পা বাঁদা অবস্থায় ৫৯ জনের লাশ উদ্ধার করে কোন প্রকার ধর্মিয় সংস্কার ছাড়াই দিঘির পশ্চিম পাড়ে সমাহিত করা হয়। সেদিন যারা দেশের জন্য আত্মাহুতি দিয়েছিলেন তাঁরা হলেন—
১।পুতুল অধিকারী ( নাট্য সম্পাদক পাঁচগাঁও আদর্শ সংঘ
২।নীরদ শব্দকর
৩।ব্রজেন্দ্র শব্দকর ৪।মনাই শব্দকর ৫।বীরেন্দ্র শব্দকর ৬। সুররাম শব্দকর ৭।নিত্যবালা শব্দকর ৮। উপাই শব্দকর ৯।নগরী শব্দকর ১০। হরেন্দ্র শব্দকর ১১।গোপাল শব্দকর ১২।কুমার মালাকর ১৩।অভিরাম মালাকার ১৪।রমন মালাকার(১) ১৫। রমন মালাকার (২) ১৬।রমন শব্দকর
১৭।নগাই মালাকার ১৮।নবরাম শব্দকর ১৯।সুবল মালাকার ২০। সুখেন মালাকার ২১।সুরেন্দ্র মালাকার ২২।টুনা বৈষ্ণব ২৩। লুঙ্গ মালাকার ২৪।বিধু মালাকার ২৫।রমন মালাকার(২) ২৬।আদাই মালাকার২৭। সতিশ মালাকার২৮। ইরেশ মালাকার ২৯।উমেশ মালাকার ৩০।পরেশ মালাকার(১) ৩১।নরি মালাকার ৩২।নরি মালাকার (২)৩৩।অভয়চরণ দেব ৩৪। ভগাই মালাকার ৩৫।পরেশ নমশূদ্র ৩৬।সনাতন নমশূদ্র ৩৭।ললিতা দাস ৩৮।নরেশ শব্দকর৩৯।লাল মালাকার ৪০।রস মালাকার ৪১।বিমল মালাকার ৪০।কেবলরাম মালাকার ৪১। কাউয়া মালাকার ৪২।বাদল মালাকার ৪৩।বসন্ত নমশূদ্র ৪৪। যতীন্দ্র নমশূদ্র ৪৫। পিয়ারী নমশূদ্র ৪৬। উমেশ নমশূদ্র ৪৭। কুমুদ রঞ্জন নাগ ৪৮। রজনী কান্ত দেব(শিক্ষক) ৪৯। রমণী দেব ৫০। নগেন্দ্র দেব।
বাকি ছয়জনের নাম পাওযা সম্ভব হয়নি তাই দেওয়া গেলনা। এখানেই শেষ নয় পরবর্তীতে ওই রাজাকারের দল পাকসেনাদের আমন্ত্রণ করে এনে ১৪ পুনর্বাসিতকে পাকবাহিনীর হাতে তুলে দেয় এবং তারা চরম পৈশাচিকতায় হত্যা করে ১৪ জন পাঁচগাঁওবাসীকে । এরা হলেন —নিখিল রঞ্জন চক্রবর্ত্তী ( কলেজ ছাত্র) হিরণ্ময় দাশ( ব্রিটিশ আমলের সামরিক বাহিনীর অফিসার) রসময় চক্রবর্ত্তী(১) বিনোদ চক্রবর্ত্তী, কুমুদ দেব, ও খটী শুক্লবৈদ্য।
আজ পাঁচগাঁও গনহত্যা দিবসে সেদিনের সকল শহীদের জানাই শ্রদ্ধা।
দুঃখের বিষয় আজো পাঁচগঁওে কোন স্মৃতি সৌধ পরিপুর্ণ ভাবে, স্থায়ীরূপ পায় নি।
৫২ বছর অতিক্রান্ত হওযার পর বিশ্বস্ত সুত্রে জানতে পারলাম স্মৃতি সৌধ তৈরি হয়েছে কিন্তু উদ্ভোধনের অপেক্ষায় আছে।
আমার কথা হলো গত ১৬ ডিসেম্বরে নাট্যকার সুদীপ চৌধুরীর রচনায় ও বাবুল আহমদের পরিচালনায় একটি উন্নতমানের নাটক বাংলাদেশ বেতার সিলেট কতৃক পরিবেশিত হয়েছে এবং সুধি মহলের দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হয়েছে নটকটি।
৫২ টি বছর অতিক্রন্ত হওযার পর সেই সমযকার অনেকেই আর জীবিত নেই। এখনো যদি সঠিক ইতিহাস নব প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা না যায় তাহলে একদিন সব হারিয়ে যাবে। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ এই সব গনহত্যার ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে অবশ্য পাঠ্য হিসাবে সংযোজন করা হোক তাহলে অন্ততঃ নব প্রজন্ম আমাদের আত্মত্যাগের ইতিহাস জানতে পারবে।পরিশেসে পাঁচগঁওয়ের সেদিনের সকল শহীদের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
(বিদ্রঃ নামগুলো মুক্তিযুদ্ধ গবেষক তাজুল মোহাম্মদ এর সিলেটে গনহত্যা বইথেকে নেওয়া।)