শুরু হলো অমর একুশে বইমেলা
‘ প্রান্তডেস্ক:পড় বই গড় দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’- এই প্রতিপাদ্যে গতকাল শুরু হলো ‘অমর একুশে বইমেলা-২০২৩’। বিকেল ৩টায় বাংলা অ্যাকাডেমি প্রাঙ্গণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন। পরে বিকেল ৫টায় জনসাধারণের জন্য মেলা প্রাঙ্গণ উন্মুক্ত করা হয়।
গত দুইবারের মতো এবার করোনা মহামারীর প্রকোপ না থাকায় ব্যাপক জনসমাগম আশা করা হলেও প্রথম দিন মেলায় আশানুরূপ জনসমাগম দেখা যায়নি। সরেজমিন দেখা যায়, প্রথম দিন হিসেবে মেলার স্টলগুলোতে লোকজনের ভিড় অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কম। কিছু স্টল বা প্যাভিলিয়নে অল্পসংখ্যক লোকের ভিড় থাকলেও বেশিরভাগ স্টল খালি পড়ে ছিল।
এদিকে মেলা শুরু হয়ে যাওয়ার পরও বেশকিছু স্টল তৈরির কাজ এখন শেষ হয়নি। সেগুলোতে এখনও হাতুড়ির ঠুকঠাক শব্দ শোনা যাচ্ছে। বেশিরভাগ স্টলের সামনের ময়লা-আবর্জনাও পরিষ্কার করা হয়নি। যা মেলার পরিবেশকে অনেকটা ম্লান করেছে। অধিকাংশ স্টল নির্মাণের কাজ শেষ হলেও সেগুলোতে এখন সাজানো হয়নি কোন বই। আবার কিছু স্টল বেচাকেনার জন্য প্রস্তুত থাকলেও সেগুলোতে বৈদ্যুতিক বাতির সংযোগ দেয়া হয়নি। এভাবে অনেকটা আমেজহীনভাবেই সম্পন্ন হয়েছে প্রথম দিনের মেলা।
অমর প্রকাশনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তরিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘মেলা এখনও অনেকটা অগোছালো, পুরোপুরি গোছানো হয়ে উঠেনি। আজ কাস্টমার একটু কম। কেবল শুরু তো। এখন মানুষ বই কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ সেটা দেখবে আগে, তারপর কিনতে আসবে হয়তো।’
কাকলী প্রকাশনীতে কর্মরত আকরাম হোসাইন রাজ জানান, ‘উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী মেলা পরিদর্শনে এসেছিলেন। উনার বের হতে একটু লেট হওয়াতে আমাদেরও দেরিতে স্টল খোলা হয়েছে। এজন্য কাস্টমার একটু কম পেয়েছি। আর তাছাড়া আজ এমনিতেও লোকজন কম এসেছে’ অনুপম প্রকাশনীতে কর্মরত রাফসান নামে একজন বলেন, ‘মেলায় আজ কাস্টমার কম। বেশিরভাগই দর্শক। ঘুরেফিরে বই দেখে চলেই যাচ্ছে বেশি।’
বিজ্ঞান একাডেমির স্টলে কর্মরত একজন বলেন, ‘স্টল খুলে বসে আছি। এখন পর্যন্ত স্টলে বিদ্যুৎই সরবরাহ করা যায়নি। এজন্য এই পাশের কয়েকটি স্টলে লাইট জ্বালানো যাচ্ছে না।’ তবে একটু ভিন্নমত পোষণ করে ভাষাচিত্র প্রকাশনীর সাকলাইন মুহাম্মদ হাবীব বলেন, ‘আমরা প্রথম দিন যেরকম আশা করেছিলাম সেরকমই মানুষজন এসেছে। কারণ, প্রথম দিন লোকজন একটু কম হবে, এটাই স্বাভাবিক।’
মেলা দেখতে ও বই কিনতে চট্টগ্রাম থেকে আসা রুবায়েত নামে একজন দর্শনার্থী বলেন, ‘আমি আমার জীবনের প্রথম বইমেলায় আসলাম। আমি সেই চট্টগ্রাম থেকে এসেছি। আমি একটি বই কিনেছি। আমার খুবই ভালো লাগা কাজ করছে। তবে আমার কাছে মেলার লোকজন একটু কম মনে হচ্ছে। একটু বেশি থাকলে আরও জাঁকজমক মনে হতো।’
বাংলা অ্যাকাডেমি প্রকাশিত সাত বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলা অ্যাকাডেমি প্রকাশিত নতুন সাতটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বইগুলো হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পাদিত ‘শেখ মুজিবুর রহমান রচনাবলি-প্রথম খন্ড,’ রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ রচিত‘আমার জীবন নীতি আমার রাজনীতি,’ মুহম্মদ নূরুল হুদা সম্পাদিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী পাঠ বিশ্লেষণ,‘ ‘কারাগারের রোজনামচা পাঠ বিশ্লেষণ’ ও ‘আমার দেখা নয়া চীন পাঠ বিশ্লেষণ’, হাসান আজিজুল হক রচিত ও জোহান ডব্লিউ হুড অনূদিত ‘দ্য লেটার অব সাবিত্রী’ এবং ‘জেলা সাহিত্য মেলা-২০২২-১ম খন্ড ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, এবারের বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলা অ্যাকাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গা জুড়ে। অ্যাকাডেমি প্রাঙ্গণে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি ইউনিট অর্থাৎ মোট ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে ৯০১টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
মেলায় ৩৮টি প্যাভিলিয়ন থাকছে। বইমেলা ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। রাত ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। ছুটির দিন বইমেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।