আজ কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের৮৪ তম জন্মদিন

রাঢ়বঙ্গ তার অনেক গল্পের পটভূমি। আগুনপাখি (২০০৬) হক রচিত প্রথম উপন্যাস। তিনি ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। বাংলাদেশ সরকার তাকে ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে একুশে পদকে ও ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে। এই অসামান্য গদ্যশিল্পী তার সার্বজৈবনিক সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে “সাহিত্যরত্ন” উপাধি লাভ করেন।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত একনাগাড়ে ৩১ বছর অধ্যাপনা করেন। ২০০৯-এ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু চেয়ার পদের জন্য মনোনীত হন এবং দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ এর আগস্ট এ তিনি বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ এর সভাপতি নির্বাচিত হন। তার নিজস্ব বাসভবন ‘উজান’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব দিকে ‘বিহাস’-এ।
রাজশাহী কলেজে পড়ার সময় কলেজের উদ্যমী তরুণ মিসবাহুল আজীমের সম্পাদনায় প্রকাশিত ভাঁজপত্র ‘চারপাতা’য় হাসানের প্রথম লেখা ছাপা হয়, লেখাটির বিষয় ছিল রাজশাহীর আমের মাহাত্ম্য। তবে সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত সমকাল পত্রিকায় পত্রিকায় ১৯৬০ সালে ‘শকুন’ শীর্ষক গল্প প্রকাশের মধ্য দিয়ে হাসান আজিজুল হক সাহিত্যাঙ্গনে তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তবে কৈশোর জীবনেই তার সাহিত্যচর্চার হাতেখড়ি।
তিনি যখন কাশীশ্বরী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র তখন ঐ স্কুলে রাজা সৌমেন্দ্র চন্দ্র নন্দীর আগমন উপলক্ষ্যে একটি সম্বর্ধনাপত্র রচনার মধ্য দিয়ে তার লেখালেখি জীবনের শুরু। এছাড়া প্রবেশিকা পাশের পরপরই তিনি লেখেন ‘মাটি ও মানুষ’ শীর্ষক একটি উপন্যাস; যে রচনাটি অদ্যাবধি অপ্রকাশিত। ‘শকুন’ গল্পটি প্রকাশের আগেই ১৯৫৬ সালে নাসির উদ্দিন আহমেদ সম্পাদিত ‘মুকুল’ পত্রিকায় তার ‘মাটি ও পাহাড়’ শীর্ষক একটি গল্প প্রকাশিত হয়েছিল।
১৯৬০ সালে ‘পূর্বমেঘ’ পত্রিকায় ‘একজন চরিত্রহীনের স্বপক্ষে’ গল্পটি প্রকাশিত হওয়ার পরই তিনি একজন ব্যাতিক্রমী কথাশিল্পী হিসেবে পরিগণিত হতে থাকেন। অচিরেই বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বশীল সবগুলো পত্রিকায় তার ছোটগল্প প্রকাশিত হতে থাকে। ‘পূবালী’, ‘কালবেলা’, ‘গণসাহিত্য’, ‘ছোটগল্প’, ‘নাগরিক’, ‘পরিক্রম’, ‘কণ্ঠস্বর’, ‘পূর্বমেঘ’ প্রভৃতি পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখেছেন।
১৯৬৩ সালে সুহৃদ নাজিম মাহমুদের সহযোগিতায় সন্দীপন গোষ্ঠী নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে হাসান আজিজুল হক যুক্ত হন। হাসান আজিজুল হক এ সময় সুহৃদ নাজিম মাহমুদের সাথে যুগ্মভাবে সম্পাদনা করেন ‘সন্দীপন’ শীর্ষক একটি সাহিত্য পত্রিকা। ষাটের দশকের প্রথম দিকে নাজিম মাহমুদ, মুস্তাফিজুর রহমান, জহরলাল রায়, সাধন সরকার, খালেদ রশীদ প্রমুখ সংগ্রামী কয়েকজন তরুণের চেষ্টায় গঠিত হয়েছিল ‘সন্দীপন গোষ্ঠী’।
পারিবারিক জীবন
গল্পকার হাসানের স্ত্রী শামসুন নাহার। তারা তিন কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক-জননী।
সাহিত্যকর্ম
হাসান আজিজুল হকের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে: সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য (১৯৬৪), আত্মজা ও একটি করবী গাছ (১৯৬৭), জীবন ঘষে আগুন ১৯৭৩, নামহীন গোত্রহীন ১৯৭৫, পাতালে হাসপাতালে ১৯৮১, নির্বাচিত গল্প ১৯৮৭, আমরা অপেক্ষা করছি ১৯৮৮, রাঢ়বঙ্গের গল্প ১৯৯১, রোদে যাবো ১৯৯৫, হাসান আজিজুল হকের শ্রেষ্ঠগল্প ১৯৯৫, মা মেয়ের সংসার ১৯৯৭, বিধবাদের কথা ও অন্যান্য গল্প ২০০৭।
প্রবন্ধ: কথাসাহিত্যের কথকতা ১৯৮১, চালচিত্রের খুঁটিনাটি ১৯৮৬, অপ্রকাশের ভার ১৯৮৮, সক্রেটিস ১৯৮৬, অতলের আধি ১৯৯৮, কথা লেখা কথা ২০০৩, লোকযাত্রা আধুনিক সাহিত্য ২০০৫, একাত্তর : করতলে ছিন্নমাথা ২০০৫, ছড়ানো ছিটানো ২০০৮, কে বাঁচে কে বাঁচায় ২০০৯, বাচনিক আত্মজৈবনিক ২০১১, চিন্তন-কণা ২০১৩, রবীন্দ্রনাথ ও ভাষাভাবনা ২০১৪।
উপন্যাস: আগুনপাখি ২০০৬, সাবিত্রী উপাখ্যান ২০১৩, শামুক ২০১৫।উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক-কে”সিলেটপ্রান্ত” স্মরন করছে বিনম্র শ্রদ্ধায়,আর জানাচ্ছে লাখো সালাম।