ফারুকী বললেন::ফারাজের এক ঘণ্টা আগে হলেও শনিবার বিকেল মুক্তি পাওয়া উচিত
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ছবি ফেসবুক থেকে নেওয়া।
আনিসুর বুলবুল: শনিবার বিকেল। গুলশানের হলি আর্টিজান হামলা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করা হয়েছে ছবিটি। নির্মাণ করেছেন গুণী পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। বিভিন্ন দেশের উৎসবে প্রশংসিত হয়েছে ছবিটি। কানাডার টরেন্টোতে ছবিটি দেখে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলের কথাই লিখেছেন। অথচ ছবিটি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে আটকে আছে। ছবিটি মুক্তির দাবিতে এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা চলছে। ছবিটি মুক্তি চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের শতাধিক সংস্কৃতিকর্মী।
শনিবার বিকেল প্রসঙ্গে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে কথা হয় পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সঙ্গে। তিনি বললেন, একই ঘটনার অনুপ্রেরণায় তৈরি বিদেশি ছবি ফারাজের এক ঘণ্টা আগে হলেও শনিবার বিকেল মুক্তি পাওয়া উচিত। না পেলে আমরা এমন কর্মসূচি হাতে নেব, যেন ছবিটি মানুষের কাছে পৌঁছায়।
কেন আটকে আছে শনিবারের বিকেল?
শনিবার বিকেল বানিয়ে কোনো অন্যায় করিনি। আমার বিশ্বাস, সরকারের নীতিনির্ধারকেরা নিশ্চয়ই বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। এ ছবি আটকে দিয়ে আমাদের দেশকেই হেয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি শুধু বলতে পারি, ছবিটি আটকানোর প্রক্রিয়াটি নিয়মবহির্ভূত।
ছবিটি তো সেন্সর বোর্ডের সদস্যরা দেখে ভালো বলেছিলেন
হ্যাঁ। তথ্য মন্ত্রণালয় ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন দপ্তর আমাদের চিত্রনাট্য পড়ে অনুমোদন দেয়। সেই চিত্রনাট্য থেকেই ছবিটি তৈরি করে আমরা সেন্সর বোর্ডে জমা দিলাম। সেটার প্রথম প্রদর্শনী হলো ২০১৯ সালের ৯ জানুয়ারি। সেন্সর বোর্ড সদস্যরা ছবিটি দেখে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ইন্টারভিউ দিয়ে বললেন, ছবিটি ভালো হয়েছে।
তাহলে কেন সার্টিফিকেট দেওয়া হলো না?
তারপর যেটা ঘটল, ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশের সামাজিক যোগযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী কিছু ধর্মীয় রাজনীতি করা মানুষের লিংকে দাবি করা হলো, শনিবার বিকেল নিষিদ্ধ করতে হবে।
কেন?
আসলে, যারা এ কাজটা করলেন, তারা কেউই কিন্তু সিনেমাটা দেখেননি। আমি বলতে চাই, গোয়েন্দারা খুঁজে বের করুক, ছবি মুক্তি পাওয়ার আগেই কে বা কারা এর পেছনে ছিল।
আপনারা তো আপিলও করেছিলেন?
আমরা আপিল করেছিলাম। যে ছবি দেখে সেন্সর বোর্ড সদস্যরা সার্টিফিকেট দেওয়ার কথা বললেন, সেই ছবি কেন দ্বিতীয়বার দেখে সার্টিফিকেট দিতে অস্বীকৃতি জানানো হলো? আপিল কমিটির সভাও হয়ে গেল ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারিতে। এরপর সাড়ে তিন বছর আমাদের কিছুই জানানো হলো না।
এরপর?
এরপর গত বছরের আগস্টে ফ্যাবের পক্ষ থেকে আন্দোলন শুরু হলে আমাদের জানানো হলো ছবিটি ছেড়ে দেওয়া হবে। তাদের দুয়েকটা পর্যবেক্ষণ আছে। সেসব ঠিক করে দিলেই ছেড়ে দিচ্ছেন। তারা দ্রুতই চিঠি দিয়ে জানাবেন। কিন্তু আমাদের চিঠি না দিয়ে এখন আবারও আপিল কমিটির সভা ডাকা হলো, যে সভা তিন বছর আগেই একবার হয়ে গেছে! কাল আপিল কমিটি নিশ্চয়ই ব্যাপারটা গুরুত্ব দিয়ে দেখবে।
ছবিটি আটকে থাকায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে কী?
ডেফিনিটলি। বিভিন্ন দেশের উৎসবে শনিবার বিকেল দেখানো হয়েছে। ছবিটি নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসে রিপোর্ট হয়েছে। ছবিটি দেশি-বিদেশি অনেকেই দেখেছেন, লিখেছেন। তারা তো ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার মতো কিছু পাননি।
ফারাজের আগে কেন মুক্তি পাওয়া উচিত?
দেশের একই ঘটনার অনুপ্রেরণায় অনেক আগেই শনিবার বিকেল তৈরি করেছি। বিদেশি একজন পরিচালক তো সে ঘটনারই চিত্রায়ণ করেছেন। ফেব্রুয়ারি মাসের ৩ তারিখে সেটা মুক্তি পাবে। এটা শুধু আমাদের দেশের পরিচালকদের আত্মমর্যাদার প্রশ্ন নয়, বাংলাদেশেরই আত্মমর্যাদার ভার।
আপনারা কোনো কর্মসূচি হাতে নিচ্ছেন?
আমরা কোনো কর্মসূচি হাতে নিতে চাই না। কারণ আমাদের কাজ ফিল্ম বানানো। কিন্তু যদি পরিস্থিতি এমন হয়, আমাদের কর্মসূচি হাতে নিতে হবে; তাহলে ডেফিনিটলি আমরা এমন কর্মসূচি হাতে নেব যেটা শনিবার বিকেলকে মানুষের কাছে পৌঁছাবে। আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই, ফারাজ মুক্তির এক ঘণ্টা আগে হলেও বাংলাদেশের মানুষ শনিবার বিকেল দেখবে।(সৌজন্যে:দৈনিক দেশরূপান্তর)