বিশিষ্ট বিজ্ঞান গবেষক ও সাহিত্যিকগিরিজাপতি ভট্টাচার্য’র প্রয়ান দিনআজ
প্রান্তডেস্ক:গিরিজাপতি ভট্টাচার্য ( ১৬ সেপ্টেম্বর ১৮৯৩ ― ১৩ ডিসেম্বর ১৯৮১) ছিলেন একজন বিশিষ্ট বিজ্ঞান গবেষক ও সাহিত্যিক।
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
গিরিজাপতি ভট্টাচার্যের জন্ম ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই সেপ্টেম্বর। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল অধুনা পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার নৈহাটিতে। পিতা আশুতোষ ভট্টাচার্য ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার। গিরিজাপতি মাতামহ দুর্গাচরণ চক্রবর্তীর কাছে হুগলির সোমড়াবাজারে প্রতিপালিত হন। তিনি বর্ধমান রাজ কলেজিয়েট স্কুল, কলকাতার হিন্দু স্কুল এবং প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র ছিলেন। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত গণিতে তথা অ্যাপ্লায়েড ম্যাথামেটিক্সে এসএসসি পাশ করেন। খ্যাতনামা চিকিৎসক ও সাহিত্যিক পশুপতি ভট্টাচার্য ছিলেন তাঁর অগ্রজ।
কর্মজীবন
এসএসসি পাশের পর গিরিজাপতি কিছুদিন প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশের তত্ত্বাবধানে গবেষণা করেন। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে বাঙ্গালোরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স-এ যোগ দেন। কিন্তু আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের আহ্বানে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন এবং স্বদেশী দ্রব্য তৈরির জন্য ক্যালকাটা সোপ ওয়ার্কস-এ যোগ দেন। ‘নির্মলিন’, ‘ডালি’, ‘বাংলা গোলা’ নামে কয়েকটি জনপ্রিয় সাবান প্রস্তুত করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজের ব্যবহারের জন্য সেসময়ে এক ধরনের তরল সাবান তিনি তৈরি করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার নাম দিয়েছিলেন তরলিকা। সোপ টেকনোলজি সম্পর্কে বিশদ জানতে তিনি মহীশূর ও কালিকটের সরকারি সাবান কারখানা থেকে কিছু শিক্ষা লাভ করেন এবং পরে ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহযাত্রী হয়ে বিদেশ গমন করেন। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও জার্মানিতে আধুনিক সাবান, গ্লিসারিন ও বিভিন্ন সুগন্ধি প্রস্তুত করার শিক্ষা ও প্রণালী আয়ত্ত করেন। দেশে ফিরে তিনি ১৯২৭-৩৮ খ্রিস্টাব্দে যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেকনোলজি কলেজে সোপ টেকনোলজি বিভাগে অধ্যাপনা করেন। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি গবেষণাগারে যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী সংস্থা Adair Dutt & Co. তে যোগদান করেন। সংস্থাটি পরে জাতীয়করণ করা হলে তিনি ম্যানেজিং ডিরেক্টর নিযুক্ত হন। তাঁর তত্ত্বাবধানে এদেশে গবেষণাকাজের উপযোগী বহুবিধ যন্ত্রপাতি নির্মিত হয়। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ইন্ডিয়ান ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হলে গিরিজাপতি তার সহ সভাপতি ও পরবর্তীকালে পূর্বাঞ্চলীয় আঞ্চলিক কার্যালয়ের সভাপতি হন। ভারত সরকারের ‘সেন্ট্রাল সায়েন্টিফিক ইনস্ট্রুমেন্ট অরগানাইজেশন’-এর উপদেষ্টামণ্ডলীর ও পরে কার্যকরীমণ্ডলীর সদস্য মনোনীত হন।
গিরিজাপতির অগ্রজ পশুপতি ভট্টাচার্য যেমন চিকিৎসক হয়েও সাহিত্যচর্চা করেছেন, ঠিক তেমনই গিরিজাপতি বিজ্ঞান গবেষক হিসাবে কর্মজীবনে ব্যস্ত থেকে ও সাহিত্যচর্চা করে গেছেন। তাঁর বহু প্রবন্ধ ছোটগল্প শিকারের কাহিনী,বিশিষ্ট বিদগ্ধ জনের জীবনী, বিখ্যাত লেখকের প্রকাশিত পুস্তকের সমালোচনা বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে। বন্ধুবর কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্তের সম্পাদনায় নিজে একজন প্রতিষ্ঠাতা হয়ে ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে পরিচয় সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশের যথাসাধ্য সাহায্য করেন।
গিরিজাপতির শিকারে, সঙ্গীতে, ফটোগ্রাফিতে এবং চিত্রাঙ্কনে যথেষ্ট আগ্রহ ছিল।
জীবনাবসান
গিরিজাপতি ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই ডিসেম্বর ৮৮ বৎসর বয়সে প্রয়াত হন।