স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপ্লবী সতীশচন্দ্র পাকড়াশীর জন্মদিন আজ
প্রান্তডেস্ক: ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং বাঙালি সশস্ত্র বিপ্লববাদী সতীশচন্দ্র পাকড়াশী জন্মদিন আজ। ১৮৯১ সালের ১৩ ডিসেম্বর নরসিংদী জেলার মাধবদিতে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। তার পিতার নাম জগদীশচন্দ্র পাকড়াশী ও মাতার নাম মৃণালিনী দেবী।
সতীশচন্দ্র পাকড়াশী ছাত্রাবস্থায় প্রখ্যাত বিপ্লবী ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী মহারাজের সান্নিধ্যে এসে ১৪ বছর বয়েসে গুপ্ত বিপ্লবী দল অনুশীলন সমিতির সদস্য হন। ১৯১১ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় পাশ করে ঐ বছরই অস্ত্র আইনে সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করেন। মুক্তি পেয়ে নরসিংদীতে ফিরে এসে আবার দলের কাজে গোপনে যোগ দেন। তাকে মালদহে পাঠানো হয়। ১৯১৪ সালে তিনি কলকাতা যান। সতীশ পাকড়াশী আইবি পুলিশের সুপারিন্টেডেন্টকে হত্যা করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী সুপারিন্টেডেন্টর বৈঠকখানায় বোমা নিক্ষেপ করা হলেও ভুলের কারণে নিক্ষিপ্ত বোমায় সতীশ নিজেই প্রচণ্ডভাবে আহত হন। রাজশাহী সায়েন্স কলেজের ছাত্ররা তাকে তাদের হোস্টেলে আশ্রয় দেন এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তার নামে ব্রিটিশ সরকার একাধিক রাজনৈতিক ডাকাতির অপরাধে ওয়ারেন্ট জারি করেছিল।
১৯১৮ সালে কলকাতায় ধরা পড়লে তাকে প্রথমে প্রেসিডেন্সি জেল ও পরে রাজসাহী জেলে পাঠানো হয়। তিন বছর পরে মুক্তি পান। ১৯২৩ সালে সোভিয়েত রাশিয়া থেকে আগত বিপ্লবী অবনী মুখোপাধ্যায়ের সাথে তাকে রাশিয়ায় পাঠানোর চেষ্টা করে সমিতি তবে তা ব্যর্থ হয়। ১৯২৩ এর সেপ্টেম্বর মাসে তিনি আবার গ্রেফতার হন এবং রাজবন্দী হিসেবে ৫ বছর জেল খাটেন। এই সময় তিনি অলিপুর, মেদিনীপুর, ঢাকা, মহারাষ্ট্রের যারবেদা এবং কর্ণাটকের বেলগাঁও জেলে আটক থাকেন। ১৯২৯ এ মেছুয়াবাজার বোমা মামলায় গ্রেপ্তার হলে তার আন্দামানে দ্বীপান্তর হয়। ১৯৩৩ থেকে ছয় বছর সেলুলার জেলে বন্দী থাকেন। এই সময় তিনি কমিউনিজমে আকৃষ্ট হন। তার জীবনের ৩২ বছর কারান্তরালে কেটেছে। ১১ বছর আত্মগোপন করে ছিলেন।
জেলে কমিউনিস্ট কনসলিডেশন এর সভ্য ছিলেন। সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ নিয়ে পড়াশোনা করতেন। কারামুক্তির পর ১৯৩৮ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেছিলেন তিনি। পার্টি নিষিদ্ধ হলে আত্মগোপন করেন। বক্সা দুর্গে বন্দী ছিলেন অন্যান্য কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের সাথে। ১৯৬৪ সালে পার্টি ভাগ হলে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী)তে যোগ দেন। পরে পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।
তার রচিত গ্রন্থ অগ্নিযুগের কথা। এছাড়া স্বাধীনতা ও অনুশীলন পত্রিকায় তিনি বহু লেখা লিখেছিলেন। ঢাকার প্রগতি লেখক সংঘের প্রবীণ সদস্য ও বাংলাদেশ শহীদ প্রীতি সমিতির সভাপতিও ছিলেন।
১৯৭১ সালে তিনি হাঁপানী রোগে আক্রান্ত হন। ১৯৭২ সালে কোমর ভেঙে যাওয়ায় কলকাতার পিজি হাসপাতালে চিকিকৎসা নিয়েছেন। তারপর ১৯৭৩ সালে ডিসেম্বর মাসে একদিন তিনি হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ায় তাকে আবার পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু না এবার আর তিনি সেরে ওঠেননি। সে বছর ৩০ ডিসেম্বর তিনি সেখানেই মারা যান।
কমরেড সতীশ পাকড়াশীর জীবন ও তাঁর লেখা ‘অগ্নিযুগের কথা’ গ্রন্থটির মূল্যায়ন করে কমরেড মুজাফ্ফর আহ্মদ লিখেছেন, ‘অগ্নিযুগের কথা’ কমরেড সতীশ পাকড়াশীর ‘স্মৃতি কথা’। অনাড়ম্বর ভাষায় তিনি তাঁর সন্ত্রাসবাদী জীবনের কথা এই পুস্তকে লিপিবদ্ধ করেছেন। …. দীর্ঘ জীবনের রাজনীতিক অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে তিনি বুঝেছেন যে জনগণকে বাদ দিয়ে বিপ্লব হয় না এবং কমিউনিস্ট পার্টি জনগণের একমাত্র বিপ্লবী পার্টি। অনেক ঝড়-ঝঞ্জার ভেতর দিয়েও কি করে কাজে লেগে থাকতে হয় তা আমরা কমরেড পাকড়াশীর জীবন থেকে শিখতে পারি।