সাগর-রুনী হত্যা : তদন্ত প্রতিবেদন হয়নি আট বছরেও, সময় নেয়া হয়েছে ৭১ বার!
প্রান্তডেস্ক:আগামীকাল১১ ফেব্রুয়ারি।সাংবাদিকর সাগ রুনি হত্যার আট বছর পূর্ন হবে।কিন্তু আট বছরে ও সাংবাদিক দম্পতি সাগ রুনি হত্যার তদন্ত শেষ করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশের গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের (ডিবি) পর র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) তদন্তেও স্থবিরতা নেমে এসেছে। ঘটনাস্থলে দুই অজ্ঞাত পুরুষের ডিএনএ পাওয়া গেছে। তবে তাদের শনাক্ত করতে পারেনি তদন্ত সংস্থা।
অত্যন্ত ধীর গতির তদন্ত কার্যক্রমে চরম হতাশা প্রকাশ করেছে সাগর-রুনীর পরিবার। এ নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের মাঝেও ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। তবে শিগগিরই তদন্তের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে বলে আশার বাণী শুনিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব সদর দফতরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম বলেন, তদন্তে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সাগরের মা সহ সংশ্লিষ্ট সবার বক্তব্য গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন আসামিকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা চলছে। আশা করা হচ্ছে, শিগগিরই তদন্তের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দৃশ্যমান হবে।
২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক গোলাম মোস্তফা সারোয়ার (সাগর সারোয়ার) ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন নাহার রুনা (মেহেরুন রুনী) দম্পতি খুন হন। ঘটনার পরের দিন রুনীর ভাই নওশের আলম রোমান রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা করেন।
আট বছরে এ মামলায় আদালতের মোট দুই শতাধিক কার্যদিবস ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে শুধু তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৭১ বার সময় নেয়া হয়েছে। সর্বশেষ ১২ ডিসেম্বর (২০১৯) মামলার প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ওইদিন প্রতিবেদন দাখিল না করায় আদালত প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
দফায় দফায় তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন : এ মামলার তদন্তকাজ প্রথমে শুরু করেন শেরেবাংলা নগর থানার এসআই মো. জহুরুল ইসলাম। এরপর ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ফেব্রুয়ারি ডিবি উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলম এ মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন। হাইকোর্ট বিভাগের এক রিট পিটিশনে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ এপ্রিল মামলার তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেয়া হয়। পরদিন ১৯ এপ্রিল র্যাব সদর দফতরের সিনিয়র পুলিশ সুপার মো. জাফর উল্লাহ মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন।
র্যাবের এ কর্মকর্তা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে যাওয়ায় ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ১২ মার্চ এ মামলার তদন্তভার পান র্যাব সদর দফতরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. ওয়ারেছ আলী মিয়া। নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি এ কর্মকর্তা মামলার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সাগর-রুনীর ছেলে মাহির সরোয়ার মেঘকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার জবানবন্দি ১৬১ ধারায় লিপিবদ্ধ করেন।
২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি র্যাব সদর দফতরের সহকারী পরিচালক সহকারী পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন আহম্মদ এ মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন। তিনি মামলার নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করেন। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের র্যাব সদর দফতরের সহকারী পুলিশ সুপার মো. সহিদার রহমানের হাত ঘুরে বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম। তিনি আগের সাক্ষীদের পর্যালোচনা করে তদন্ত অব্যাহত রেখেছেন।
তদন্তের অগ্রগতি : আট বছরে র্যাব এ মামলার পাঁচটি তদন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেছে। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ২ ফেব্রুয়ারি, একই বছরের ৭ জুন, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ২ অক্টোবর ও সর্বশেষ ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ২১ মার্চ তদন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তদন্ত অগ্রগতি সংক্রান্ত প্রতিটি প্রতিবেদনে প্রায় একই ধরনের তথ্য উল্লেখ করা হয়।
সর্বশেষ তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে আলামত পরীক্ষা করে ঘটনাস্থলে দুই অজ্ঞাত পুরুষ ব্যক্তির ডিএনএ পাওয়া গেছে। তাদের শনাক্ত করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এছাড়া আগের চারটি অগ্রগতি প্রতিবেদনের মতো সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদনেও বলা হয়- ঘটনাস্থল থেকে চুরি যাওয়া ল্যাপটপ বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে কিনা। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। মামলার ভিকটিম মিডিয়া কর্মী হওয়ায় তদন্তকালে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে তদন্ত করা হচ্ছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন, বিভিন্ন আলামত পরীক্ষা, বিদেশি বিশেষজ্ঞদের মতামত, বিভিন্ন ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ, সমসাময়িক অন্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বিশ্লেষণ, ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী থানাসমূহে একই অপরাধ প্রক্রিয়ায় সংঘটিত অপরাধ ও অপরাধীদের বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত করা হচ্ছে। গ্রিল কাটা অপরাধে চোর-ডাকাতদের বিষয়েও নিবিড়ভাবে তদন্ত অব্যাহত আছে।
চাঞ্চল্যকর এ মামলায় আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন- মিন্টু (বারোগিরা মিন্টু), মো. কামরুল ইসলাম হারুন, বকুল মিয়া, রফিকুল ইসলাম, আবু সাঈদ, এনায়েত আহম্মেদ (হুমায়ূন কবীর), পলাশ রুদ্র পাল ও মো. তানভীর রহমান। প্রথম ছয়জন কারাগারে। অপর দুইজন হাইকোর্ট থেকে জামিনে আছেন।