আমি সারা বিশ্বের এক নম্বর অর্থমন্ত্রী : কামাল
প্রান্তডেস্ক:জাতীয় সংসদে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সদস্যদের সমালোচনার মুখে উষ্মা প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘একবার চিন্তা করে দেখেন। সাইফুর রহমান (সাবেক অর্থমন্ত্রী) চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট ছিলেন। আমিও তাই। আমি সারা বিশ্বের এক নম্বর অর্থমন্ত্রী।’ এ সময় ‘বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অর্থমন্ত্রীর’ খেতাব পাওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেন কামাল।গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাগুলোর তহবিলের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা তৈরিতে বিল পাসের জন্য সংসদে তুলেন। এ সময় এর বিরোধিতায় সরব হন বিরোধীদের আসনে বসা দুই দলের সদস্যরা।জাতীয় পার্টির সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ী হলে যা হয় তাই হয়েছে। বাজেট করার সময় চিন্তা করেননি? রাজস্ব ঘাটতি সম্পর্কে চিন্তা করেননি? ৩৫ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি। আগের বছরের চেয়ে ৪৫ শতাংশ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করেছিলেন। করেছেন মাত্র ৭ শতাংশ। এনবিআরের ব্যর্থতার কারণে এই বিল সমর্থন করতে পারছি না। প্রত্যাহার করার দাবি করছি। তিনি বলেন, আমি একজন অ্যাডভোকেট। এটা বললে কি অপরাধ হবে? উনি চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট। কিন্তু উনার মূল পরিচয় একজন ব্যবসায়ী। এটাতে আহত হওয়ার কারণ নেই। আমরা আশা করেছিলাম সাকসেসফুল বিজনেসম্যান অর্থনীতিতে ভালো করবেন। কতদূর ভালো করেছেন উনি চিন্তা করবেন। ব্যাংকের মালিক ডিরেক্টররা ঋণ নিয়ে বসে আছেন। এটা কী দেশ? টাকা পাচার হয় উনি ব্যবস্থা নেন না। বিভিন্ন সংস্থার টাকা খরচ করছেন। আগামী বছর ট্যাক্স না পেলে কী করবেন। বিগত সরকারের শ্রম প্রতিমন্ত্রী চুন্নু বলেন, ২০১৭ সালে আমাকে বেস্ট লেবার মিনিস্টারের অ্যাওয়ার্ড দিয়েছিল। কেন যে দিয়েছিল, তা আমি জানি না।অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী অসাধারণ মেধাবী ছাত্র ছিলেন। সাধারণ অবস্থা থেকে ব্যবসায়ী হয়েছেন। উনি অর্থনীতি বোঝেন না এটা পাগলেও বিশ্বাস করবে না। তাহলে সমস্যটা কোথায়? উনার সদিচ্ছার অভাব। এত মেধাবী তিনি কিন্তু শেয়ারবাজার, খেলাপি ঋণ নিয়ে কিছু করলেন না। কেন মেধাবী অর্থমন্ত্রী এদিকে নজর দিচ্ছেন না? উনি ধনী সমাজের জন্য অর্থমন্ত্রী হননি। কেন খেটে খাওয়া মানুষের দিকে উনার নজর নেই?’জবাব দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, একবার চিন্তা করে দেখেন। সাইফুর রহমান চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট ছিলেন। আমিও তাই। আমি সারা বিশ্বের এক নম্বর অর্থমন্ত্রী। পারসোনাল লেভেলে কথা বলবেন, এটা ঠিক নয়। আমিও অনেক কিছু বলতে পারি। সবার বিষয়েই আমি জানি।বিএনপি ও জাতীয় পার্টির আরও বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে বক্তব্য দেন, যা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, এত বক্তৃতা শুনতে ভালো লাগেনি। আপনারা এক সময় দায়িত্বে ছিলেন। কী কাজ করেছেন? পৃথিবীতে কোথায় কী হচ্ছে জানা দরকার। বাংলাদেশ অন্য দেশের কাছে দৃষ্টান্ত। আপনারা বলছেন, ব্যাংক, শেয়ারবাজার সব খালি করে ফেলেছি। আপনাদের সময় পুঁজিবাজার কী ছিল? আপনাদের সময় ইনডেক্স কী ছিল? এবার সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা। অর্থনীতিতে ওঠানামা থাকে।বিলের পক্ষে যুক্তি দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানগুলো কার টাকায় তৈরি হয়েছে? সরকারের টাকায়। জনগণের টাকায়। তৈরির সময় যদি সরকার টাকা দেয় তবে লাভের সময় ইচ্ছামতো বোনাস নেবে। বিদেশে ঘুরবে তা হয় না। পরে বিলটি সংসদ সদস্যদের কণ্ঠভোটে পাস হয়, যদিও বিএনপি-জাতীয় পার্টির সদস্যরা বিপক্ষে ভোট দেন।উল্লেখ্য, লন্ডনভিত্তিক ‘দ্য ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস’ গ্রুপের সাময়িকী ‘দ্য ব্যাংকার’ গেল মাসে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে ‘ফাইন্যান্স মিনিস্টার অব দ্য ইয়ার ২০২০’ ঘোষণা করে।